Ekhono Bhalobashi Natok Story | Musfiq R Farhan & Keya Payel | এখনো ভালোবাসি নাটক
ভূমিকা: সময়ের স্রোতে হারিয়ে যাওয়া এক অসমাপ্ত প্রেমের পুনরাবৃত্তি
ভালোবাসা কি সময়ের সাথে হারিয়ে যায়? নাকি অভিমানের মেঘে ঢাকা পড়ে সাময়িক আড়ালে চলে যায়? কিছু সম্পর্ক ভাঙনের শব্দ দিয়ে শেষ হয়, কিন্তু তার প্রতিধ্বনি আজীবন তাড়িয়ে বেড়ায়। আবার কিছু গল্প শেষ হয়েও যেন শেষ হয় না, नियति তাকে এক অপ্রত্যাশিত মোড়ে এনে আবার দাঁড় করায়। "এখনো ভালোবাসি" নাটকটি ঠিক তেমনই এক তীব্র অভিমানী, সংবেদনশীল এবং গভীর প্রেমের গল্প। ফারহান ও নীলার এই গল্প শুধু দুটি মানুষের ভালোবাসার নয়, বরং এটি আত্মসম্মান, বাস্তবতা এবং ক্যারিয়ারের টানাপোড়েনে হারিয়ে যাওয়া বিশ্বাসকে নতুন করে খুঁজে পাওয়ার এক অনবদ্য যাত্রা, যা দর্শকদের আবেগের প্রতিটি স্তরকে স্পর্শ করবে। এই কাহিনী আপনাকে শেখাবে কীভাবে ভুলের মাশুল দিয়ে সম্পর্ককে নতুন করে গড়া যায়, যখন চারপাশের সবকিছু বিপক্ষে থাকে।
প্রথম পর্ব: অতীতের ছেঁড়া পাতায় এক আকস্মিক সাক্ষাৎ
গল্পের নায়ক, ইফতেখার আহমেদ ফারহান (মুশফিক আর ফারহান), একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের আত্মবিশ্বাসী এবং পরিশ্রমী যুবক। একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে ভালো পদে চাকরি করে সে নিজের একটা শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে। কিন্তু তার গোছানো বর্তমানের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক এলোমেলো অতীত, যে অতীতের কেন্দ্রে ছিল নীলা (কেয়া পায়েল)। দুই বছর আগে ফারহান এবং নীলার সম্পর্কটা ভেঙে গিয়েছিল বাস্তবতার এক কঠিন আঘাতে। সেদিন ফারহান বেকার ছিল, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য তার মরিয়া চেষ্টা বারবার ব্যর্থ হচ্ছিল। পরিবার থেকে বিয়ের জন্য প্রচন্ড চাপ আসায় নীলা তাকে ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল। ফারহান হাজার চেষ্টা করেও তাকে আটকাতে পারেনি। সেই বিচ্ছেদ ফারহানকে ভেতর থেকে ভেঙে দিলেও জেদ আর আত্মসম্মান বোধ তাকে নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছিল। সে প্রতিজ্ঞা করেছিল, একদিন সে এতটা সফল হবে যে নীলার ওই সিদ্ধান্তটা ভুল প্রমাণিত হবে।
ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! একদিন সকালে ফারহানের বস তাকে ডেকে জানায়, কোম্পানির সেলস দিন দিন কমে যাওয়ায় একজন নতুন মার্কেটিং ম্যানেজার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যিনি আজই জয়েন করবেন। কিছুক্ষণ পরেই কনফারেন্স রুমে সেই নতুন ম্যানেজার হিসেবে প্রবেশ করে নীলা। দুই বছর পর এক অপ্রত্যাশিত মুহূর্তে দুজনের চোখাচোখি হয়। ফারহানের ভেতরটা পুরোনো ক্ষোভ, অভিমান আর না পাওয়ার যন্ত্রণায় দুমড়ে মুচড়ে গেলেও সে নিজেকে সামলে নেয়। অন্যদিকে নীলাও হতবাক হয়ে যায়। যে মানুষটাকে সে একদিন বেকারত্বের খোঁটা দিয়ে ছেড়ে এসেছিল, আজ সে তারই অধীনে কাজ করতে যাচ্ছে, এটা সে কল্পনাও করতে পারেনি। পরিবেশটা ভারী হয়ে ওঠে। বস সবার সাথে নীলার পরিচয় করিয়ে দিলে ফারহান ঠোঁটের কোণে এক তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটিয়ে তুলে বলে, "Welcome aboard, Ma'am. আশা করি আপনার 'অভিজ্ঞতা' আমাদের কোম্পানির কাজে লাগবে।" এই এক লাইনের মধ্যেই লুকিয়ে ছিল দুই বছরের জমানো এক সমুদ্র অভিমান। এভাবেই শুরু হয় তাদের এক ছাদের নিচে, একই অফিসে অতীতকে বয়ে বেড়ানোর এক শ্বাসরুদ্ধকর অধ্যায়।
দ্বিতীয় পর্ব: পেশাদারিত্বের আড়ালে অভিমানের যুদ্ধ
অফিসে নীলার উপস্থিতি ফারহানের জন্য এক মানসিক অত্যাচার হয়ে দাঁড়ায়। সে কিছুতেই মন থেকে মেনে নিতে পারছিল না যে নীলা তার বস। তাই পেশাদারিত্বের নামে সে নীলাকে পরোক্ষভাবে আঘাত করার কোনো সুযোগই হাতছাড়া করত না। মিটিংয়ে নীলার আইডিয়াকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়া, তার সামনে অন্য নারী কলিগদের সাথে অতিরিক্ত বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করা, কিংবা সবার সামনে তার কোনো ছোট ভুলকে বড় করে দেখানো এগুলোই ছিল ফারহানের প্রতিদিনের রুটিন। নীলা সবকিছু নীরবে সহ্য করত, কারণ সে জানত আজকের এই পরিস্থিতির জন্য সে নিজেই দায়ী। সে চেষ্টা করত ফারহানকে এড়িয়ে চলতে, কিন্তু অফিসের কাজের জন্য তাদের বারবার মুখোমুখি হতে হতো।
একদিন কোম্পানির একটি বড় প্রোডাক্ট লঞ্চিংয়ের ক্যাম্পেইনের দায়িত্ব পড়ে নীলার ওপর। ক্যাম্পেইনটি ছিল কোম্পানির জন্য বাঁচা মরার লড়াই। নীলা দিনরাত এক করে একটা নতুন আইডিয়া তৈরি করে, যা সবার বেশ পছন্দ হয়। কিন্তু ফারহান মিটিংয়ে সেই আইডিয়ার এমন কিছু যৌক্তিক খুঁত বের করে, যা নীলাকে সবার সামনে অপদস্থ করে দেয়। বস ফারহানের পয়েন্টগুলোকেই গুরুত্ব দেন এবং নীলার আইডিয়া বাতিল করে দেন। সেদিন অপমানিত হয়ে নীলা অফিস থেকে বেরিয়ে যায়। রাতে ফারহান বাড়ি ফিরে দেখতে পায়, তার মা খুব অসুস্থ। ডাক্তার জানায়, ইমার্জেন্সি অপারেশন লাগবে এবং অনেক টাকার প্রয়োজন। ফারহান তার জমানো সব টাকা দিয়েও অপমান হচ্ছে। ঠিক সেই মুহূর্তে তার ফোনে একটি অচেনা নম্বর থেকে মেসেজ আসে, "আপনার মায়ের জন্য চিন্তা করবেন না, বাকি টাকার ব্যবস্থা হয়ে গেছে।" ফারহান অবাক হয়ে ভাবে, কে হতে পারে এই মানুষটি?
তৃতীয় পর্ব: সত্যের উন্মোচন এবং অনুশোচনার আগুন
মায়ের অপারেশনের পর ফারহান জানতে পারে, তার অফিসের একজন কলিগ, সুমন, এই টাকার ব্যবস্থা করেছে। ফারহান সুমনকে ধন্যবাদ দিতে গেলে সুমন বলে, "আরে ভাই, আমি কিছুই করিনি। সব তো নীলা ম্যাম করেছেন। উনিই নিজের গহনা বন্ধক রেখে আপনার মায়ের অপারেশনের টাকার ব্যবস্থা করেছেন আর আমাকে বলেছেন আপনাকে না জানাতে।" এই কথা শোনার পর ফারহানের পায়ের নিচের মাটি সরে যায়। যে মানুষটাকে সে প্রতিদিন ছোট করার চেষ্টা করেছে, अपमान করেছে, সেই মানুষটাই তার বিপদের দিনে দেবদূতের মতো পাশে এসে দাঁড়িয়েছে! তার ভেতরটা তীব্র অনুশোচনা আর অপরাধবোধে জ্বলতে শুরু করে। সে বুঝতে পারে, অভিমানের বশবর্তী হয়ে সে কতটা অন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
সেদিন রাতেই ফারহান নীলার বাসার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। বৃষ্টি নামছিল অঝোর ধারায়। ভিজে একাকার হয়ে সে নীলার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। নীলা অফিস থেকে ফিরলে ফারহান তার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। নীলা তাকে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, "আপনি এখানে? এই বৃষ্টির মধ্যে?" ফারহান ভাঙা গলায় উত্তর দেয়, "দুই বছর আগে তুমি যখন ছেড়ে গিয়েছিলে, সেদিনও ঠিক এমনই বৃষ্টি হচ্ছিল। সেদিন আমি তোমাকে প্রশ্ন করেছিলাম, 'আমার কী দোষ ছিল?' আজ আমি উত্তরটা পেয়ে গেছি। দোষটা আমার যোগ্যতার ছিল না, ছিল সময়ের। আর আমি সেই সময়ের ওপর রাগ করে তোমার ওপর এতদিন অবিচার করেছি।" এই কথাগুলো বলতে বলতে ফারহানের চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। অনুশোচনার এই আগুনে তার সব অভিমান আর ক্ষোভ পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
চতুর্থ পর্ব: ভালোবাসার পুনর্জন্ম ও এক নতুন শুরু
এরপর থেকেই তাদের সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করে। ফারহান অফিসে নীলাকে সব কাজে সাহায্য করতে শুরু করে। তার প্রতিটি আইডিয়াকে গুরুত্ব দেয় এবং একসাথে টিম হিসেবে কাজ করে সেই বাতিল হওয়া ক্যাম্পেইনটিকে নতুন করে সফল করে তোলে। তাদের এই পরিবর্তন অফিসের সবাই লক্ষ্য করে। একদিন অফিসের এক পার্টিতে সবাই মিলে তাদের পুরোনো সম্পর্কের কথা জেনে যায় এবং তাদের নিয়ে হাসাহাসি শুরু করে। ফারহান সেদিন সবার সামনে মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বলে, "হ্যাঁ, আমাদের অতীত ছিল। একটা ভুল বোঝাবুঝির কারণে আমরা আলাদা হয়েছিলাম। কিন্তু আজ আমি সবার সামনে বলতে চাই, নীলা শুধু আমার বস নয়, সে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। তার মতো একজন মানুষকে হারিয়ে ফেলার ভুল আমি আর করতে চাই না।"
নাটকের শেষ দৃশ্যে দেখা যায়, ফারহান নীলাকে একটি লেকের পাড়ে নিয়ে আসে, যেখানে তাদের প্রথম দেখা হয়েছিল। ফারহান তার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলে, "আমি জানি অতীতে যা হয়েছে, তা ভোলার নয়। কিন্তু আমরা কি অতীতকে শিক্ষা হিসেবে নিয়ে নতুন একটা ভবিষ্যৎ গড়তে পারি না? সেদিন আমার কাছে চাকরি ছিল না, কিন্তু আজ আমার যোগ্যতা, সাফল্য সবকিছুই আছে। শুধু তুমি নেই। তুমি কি আমাকে আর একটা সুযোগ দেবে, নীলা? আমি হয়তো অতীতটা বদলাতে পারব না, কিন্তু আমি কথা দিচ্ছি, আমাদের ভবিষ্যৎটা অনেক সুন্দর হবে। কারণ আমি তোমাকে সেদিনও ভালোবাসতাম, আর সত্যিটা হলো, আমি তোমায় এখনো ভালোবাসি।" নীলার চোখে তখন আনন্দের জল। সে ফারহানের হাত ধরে তাকে উঠিয়ে দাঁড় করায়। তাদের দুজনের নীরবতাই বলে দেয়, যে ভালোবাসা অভিমানের মেঘে ঢেকে গিয়েছিল, তা অনুশোচনার বৃষ্টিতে ভিজে এক নতুন ভোরের অপেক্ষায় ছিল। যে ভোরের সূর্যোদয় হয় বিশ্বাস আর অফুরন্ত ভালোবাসা দিয়ে।
ডিসক্লেমার: এই গল্পটি নাটকের কাহিনীর উপর ভিত্তি করে একটি কল্পিত রচনা। থাম্বনেইলটি শুধুমাত্র তথ্য পরিবেশনের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে।

ফারহান ও নীলার অভিমান ভেঙে আবার ভালোবাসার আলোয় ফিরে আসার এই গল্পটি আপনার কেমন লাগলো? আপনি কি মনে করেন, জীবনে দ্বিতীয় সুযোগ বলে কিছু থাকা উচিত? আপনার মূল্যবান মতামত নিচের কমেন্ট বক্সে আমাদের সাথে শেয়ার করুন। আপনার প্রতিটি মন্তব্যই আমাদের এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা!