বোকা প্রেমিক । Boka Premik Natok 2024 | Yash Rohan | Tanjim Totini | New Bangla Natok Story
ভূমিকা: শহরের চাকচিক্য আর সরল প্রেমের দ্বন্দ্ব
কংক্রিটের এই শহরে যেখানে সবকিছুই চলে বুদ্ধি আর হিসাব নিকাশের এক জটিল সমীকরণে, সেখানে কি নিছক সরলতা দিয়ে ভালোবাসা জয় করা সম্ভব? যেখানে মানুষ মুখোশের আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পারদর্শী, সেখানে এক বিশুদ্ধ হৃদয়ের বোকা প্রেমিকের জায়গা কোথায়? "বোকা প্রেমিক" নাটকটি এমনই এক অসম প্রেমের গল্প নিয়ে তৈরি, যেখানে শহরের আধুনিক মেয়ে রোদেলার জীবনে গ্রামের সহজ সরল ছেলে আবিরের আগমন ঘটে। এই গল্প শুধু দুটি ভিন্ন জগতের মানুষের ভালোবাসার কাহিনী নয়, এটি বর্তমান সমাজের জটিল মানসিকতা, অহংকার আর সরলতার মধ্যে এক তীব্র লড়াইয়ের প্রতিচ্ছবি। আবিরের বোকা ভালোবাসা কি পারবে রোদেলার সাজানো পৃথিবীকে বদলে দিতে? নাকি শহরের স্মার্টনেসের কাছে তার সরলতা হেরে যাবে? চলুন погрузимся সেই সাসপেন্স আর আবেগের জগতে।
প্রথম পর্ব: ভুল নম্বরে রং মানুষ
গল্পের শুরুটা হয় আবিরকে (ইয়াশ রোহান) দিয়ে, যে গ্রামের এক সাধারণ ছেলে। তার পৃথিবীটা খুব ছোট, যেখানে মানুষের প্রতি বিশ্বাস আর ভালোবাসাটাই সবচেয়ে বড়। ঘটনাচক্রে সে শহরে আসে তার অসুস্থ মামাকে দেখার জন্য। শহরে এসে তার মামাতো ভাইয়ের কাছ থেকে একটা স্মার্টফোন পেলেও সেটার ব্যবহার ঠিকমতো জানত না। একদিন সে ভুল করে একটা নম্বরে ফোন দিয়ে ফেলে, আর সেই ফোনটি ধরে গল্পের নায়িকা রোদেলা (তানজিম তোতিনি)। রোদেলা একজন কর্পোরেট চাকরিজীবী, যে নিজের ক্যারিয়ার আর স্ট্যাটাস নিয়ে সবসময় সচেতন। আবিরের গ্রাম্য ভাষা আর খারাপ কথা বলার ভঙ্গি রোদেলার বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সে আবিরকে যাচ্ছেতাইভাবে অপমান করে ফোনটা কেটে দেয়। কিন্তু আবির হাল ছাড়ে না। তার সরল মনে রোদেলার কণ্ঠটা গেঁথে যায়। সে বারবার ফোন করে, মেসেজ পাঠায়, আর প্রতিবারই রোদেলার কাছ থেকে পায় শুধুই তিরস্কার।
আবিরের এই বারবার বিরক্ত করাটা রোদেলাকে এতটাই ক্ষুব্ধ করে যে, সে তার বন্ধু সারোয়ারকে (যিনি একজন পুলিশ অফিসার) ব্যাপারটা জানায়। সারোয়ার আবিরকে ফোন করে হুমকি দেয়, যেন সে আর কখনো রোদেলাকে ফোন না করে। আবির ভয় পেয়ে কিছুদিন চুপ থাকে। কিন্তু রোদেলার প্রতি তার যে সরল আকর্ষণ, তা সে মন থেকে মুছে ফেলতে পারে না। সে মনে মনে ভাবে, "একবার যদি এই আপার সাথে দেখা করতে পারতাম, তাইলে হয়তো উনি বুঝতেন আমি খারাপ মানুষ না।" এই সরল ইচ্ছাই তাকে এক নতুন পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করে, যা ছিল এক ভয়ংকর ভুলের শুরু।
দ্বিতীয় পর্ব: বোকামির মাশুল আর সন্দেহের জন্ম
আবির তার মামাতো ভাইয়ের কাছ থেকে রোদেলার অফিসের ঠিকানা জোগাড় করে। একদিন সে অনেক সাহস নিয়ে রোদেলার অফিসের নিচে গিয়ে তার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। রোদেলা অফিস থেকে বের হতেই আবির তার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আবিরকে সরাসরি দেখে রোদেলা চমকে যায় এবং প্রচন্ড রেগে গিয়ে চিৎকার শুরু করে দেয়। তার চিৎকারে আশেপাশের লোকজন জড়ো হয়ে যায় এবং তারা আবিরকে উত্যক্তকারী ভেবে মারধর শুরু করে। ঠিক সেই মুহূর্তে সেখানে সারোয়ার উপস্থিত হয় এবং পরিস্থিতি সামাল দেয়। সারোয়ার আবিরকে সেখান থেকে নিয়ে যায় এবং তাকে শেষবারের মতো সতর্ক করে দেয়।
এই ঘটনার পর রোদেলা আরও বেশি বিরক্ত হয়, কিন্তু তার মনে আবিরের জন্য কিছুটা কৌতুহলও জন্মায়। সে ভাবে, "ছেলেটা আসলেই বোকা নাকি কোনো বড় পরিকল্পনার অংশ?" অন্যদিকে, আবির মার খেয়ে আহত অবস্থায় বাসায় ফেরে। তার শরীর যতটা না কষ্ট পাচ্ছিল, তার চেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছিল তার মন। সে কিছুতেই বুঝতে পারছিল না, কেন তার সরল অনুভূতিটা কেউ বুঝতে চাইছে না। সে ভাবে, ভালোবাসা প্রকাশ করাটাও কি একটা অপরাধ? তার এই মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যেই গল্পে এক নতুন মোড় আসে, যখন রোদেলা এক বড় বিপদে পড়ে এবং কাকতালীয়ভাবে সেই বিপদের একমাত্র সাক্ষী হয়ে দাঁড়ায় আবির।
তৃতীয় পর্ব: বিপদের ছায়া এবং আবিরের ঘুরে দাঁড়ানো
রোদেলার অফিসের বস রিয়াজ সাহেব একজন প্রভাবশালী কিন্তু অসৎ ব্যক্তি। সে অনেকদিন ধরেই রোদেলাকে হেনস্তা করার চেষ্টা করছিল। একদিন অফিসের এক পার্টিতে সে সুযোগ বুঝে রোদেলার পানীয়তে কিছু মিশিয়ে দেয়। রিয়াজের উদ্দেশ্য ছিল রোদেলার দুর্বল মুহূর্তের ছবি তুলে তাকে ব্ল্যাকমেইল করা। কিন্তু ঘটনাচক্রে আবির সেদিন সেই পার্টির পাশেই এক রেস্টুরেন্টে ওয়েটারের কাজ করছিল। সে দূর থেকে সবকিছু দেখতে পায় এবং বিপদ আঁচ করতে পেরে কোনোমতে রোদেলাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে। জ্ঞান ফিরলে রোদেলা নিজেকে আবিরের মামার বাসায় আবিষ্কার করে এবং প্রথমে সে ভুল বোঝে। সে ভাবে, আবিরই হয়তো এই ঘটনার জন্য দায়ী। সে আবিরকে চড় মারে এবং চিৎকার করে বলে, "তোর মতো ছোটলোকদের আমি খুব ভালো করে চিনি।"
আবির কোনো প্রতিবাদ না করে চুপচাপ রোদেলার সব অপমান সহ্য করে। পরদিন সকালে সে রোদেলাকে তার ফোনের একটি ভিডিও দেখায়, যা সে লুকিয়ে রেকর্ড করেছিল। ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যায়, কীভাবে রিয়াজ সাহেব রোদেলার পানীয়তে ওষুধ মেশাচ্ছিল এবং তার উদ্দেশ্য কতটা ভয়ংকর ছিল। ভিডিওটি দেখে রোদেলার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায়। সে বুঝতে পারে, যে ছেলেটিকে সে এতদিন ধরে "বোকা", "গ্রাম্য" ভেবে অপমান করেছে, সেই ছেলেটিই তার সম্মান বাঁচিয়েছে। অনুশোচনায় তার মাথা নিচু হয়ে আসে। সে প্রথমবার আবিরের সরল চোখের দিকে তাকিয়ে তার সততা আর সাহসকে উপলব্ধি করে। রোদেলা: (কাঁদতে কাঁদতে) "আমি... আমি তোমাকে ভুল বুঝেছি। আমাকে মাফ করে দাও।" আবির: (মৃদু হেসে) "আপা, মাফ চাইতে হবে না। আমি তো শুধু আমার দায়িত্ব পালন করছি।" আবিরের এই উত্তরে রোদেলা এক নতুন আবিরের পরিচয় পায়।
চতুর্থ পর্ব: সত্যের জয় আর ভালোবাসার প্রকাশ
এরপর রোদেলা আবিরের সাহায্যে রিয়াজের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়। আবিরের রেকর্ড করা ভিডিওটি ছিল সবচেয়ে বড় প্রমাণ। সারোয়ারও তাদের সবরকমভাবে সাহায্য করে। রিয়াজ তার ক্ষমতা দিয়ে বাঁচার অনেক চেষ্টা করে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সত্যের জয় হয়। রিয়াজ গ্রেফতার হয় এবং রোদেলা তার সম্মান ফিরে পায়। এই পুরো সময়টা আবির ছায়ার মতো রোদেলার পাশে ছিল। তার নিঃস্বার্থ সাপোর্ট আর সরল ভালোবাসা রোদেলার মনের ভেতর এক নতুন অনুভূতি তৈরি করে। সে বুঝতে পারে, স্মার্টনেস বা স্ট্যাটাস দিয়ে সত্যিকারের ভালোবাসা মাপা যায় না।
একদিন রোদেলা নিজে আবিরের গ্রামে যায়। গ্রামের সবুজ পরিবেশ, আবিরের মাটির ঘর আর তার পরিবারের সরল আতিথেয়তা রোদেলাকে মুগ্ধ করে। সে আবিষ্কার করে, আবির শুধু একজন বোকা প্রেমিক নয়, সে একজন দায়িত্বশীল ছেলেও, যে তার পরিবারকে খুব ভালোবাসে। গ্রাম থেকে ফিরে আসার দিন রোদেলা আবিরকে বলে, "আবির, আমি শহরে ফিরে যাচ্ছি। তুমি কি আমার সাথে যাবে?" আবির অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, "আমি শহরে গিয়ে কী করব আপা?" রোদেলা আবিরের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, "আমার জীবনের সবচেয়ে বড় বোকাটাকে আমার সারাজীবনের জন্য প্রয়োজন।" এই কথা শুনে আবিরের পুরো পৃথিবী যেন এক순간ে রঙিন হয়ে ওঠে। যে ভালোবাসার জন্য সে এতদিন শুধু অপমান সহ্য করেছে, আজ সেই ভালোবাসা নিজে এসে তার দরজায় কড়া নেড়েছে।
ডিসক্লেমার: এই গল্পটি নাটকের কাহিনীর উপর ভিত্তি করে একটি কল্পিত রচনা। থাম্বনেইলটি শুধুমাত্র তথ্য পরিবেশনের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে।
আবিরের সরল এবং নিঃস্বার্থ ভালোবাসা শেষ পর্যন্ত রোদেলাকে জয় করতে পেরেছে। আপনার কি মনে হয়, আজকের জটিল পৃথিবীতেও কি এমন সরল ভালোবাসার অস্তিত্ব আছে? আবির ও রোদেলার এই গল্পটি আপনার কেমন লাগলো? আপনার মূল্যবান মতামত নিচের কমেন্ট বক্সে আমাদের সাথে শেয়ার করুন। আপনার প্রতিটি মন্তব্যই আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা!