ঈদের হেয়ার কাটিং | Eider Hair Cutting | Sofik & Sraboni | New Bangla Natok 2025
ভূমিকা: ঈদের চাঁদ ও এক নাপিতের আধুনিক হওয়ার স্বপ্ন
গ্রামের নাম রসুলপুর। ঈদের চাঁদ ওঠার সাথে সাথে যেখানে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়, সেখানেই গল্পের নায়ক শফিকের (শফিক) মনে বয়ে যায় উত্তেজনার ঝড়। শফিক গ্রামের একমাত্র সেলুনের মালিক, তবে সে নিজেকে 'নাপিত' বলতে নারাজ; তার ভাষায় সে একজন 'হেয়ার স্টাইলিস্ট'। ইউটিউব দেখে শহরের আধুনিক সব হেয়ার কাটিং সে শিখেছে, কিন্তু গ্রামের মুরব্বিদের 'কদম ছাঁট' আর 'বাটি ছাঁট' এর বাইরে বের হতে পারছে না। তার স্বপ্ন একটাই, এই ঈদে সে গ্রামের সবাইকে এমন 'স্মার্ট' হেয়ার কাটিং দেবে যা দেখে সবার চোখ কপালে উঠবে, বিশেষ করে একজনের শ্রাবণীর (শ্রাবণী)। শ্রাবণী গ্রামের চেয়ারম্যানের একমাত্র মেয়ে, যার রূপের প্রশংসা গ্রাম ছাড়িয়ে পাশের গ্রামেও পৌঁছে গেছে। শফিকের সরল মনে শ্রাবণীর জন্য ভালোবাসা আর তার ভাঙাচোরা সেলুনটাকে শহরের পার্লারের মতো বানানোর স্বপ্ন—এই নিয়েই শুরু হয় "ঈদের হেয়ার কাটিং" এর মজার কিন্তু সাসপেন্সে ভরা এক অসাধারণ গল্প।
প্রথম পর্ব: চ্যালেঞ্জ যখন প্রেস্টিজের লড়াই
ঈদের আগের দিন গ্রামের বাজারে শফিকের সেলুনে মোটামুটি ভিড়। কিন্তু ঝামেলাটা শুরু হয় তখন, যখন চেয়ারম্যানের হবু জামাই, শহরের বড় ব্যবসায়ী আরমান (প্রতিপক্ষ) দামি গাড়ি নিয়ে বাজারে আসে। আরমান হলো গল্পের সেই চরিত্র, যে নিজের টাকা আর ক্ষমতার দাপটে সবকিছু কিনতে চায়। সে শ্রাবণীকে বিয়ে করে চেয়ারম্যানের ক্ষমতাকে কাজে লাগাতে চায়। শফিকের সেলুনের সামনে দাঁড়িয়ে সে তুচ্ছতাচ্ছিল্যের সাথে বলে ওঠে, "এই গ্রামে কি চুল কাটার মতো কোনো জায়গা নেই? এগুলো তো সেলুন না, মুরগির খোপ!" কথাটা শফিকের বুকে তীরের মতো বিঁধে। গ্রামের সবার সামনে এই অপমান সে মেনে নিতে পারে না।
ঠিক তখনই ঘটে এক নাটকীয় ঘটনা। শ্রাবণী তার বান্ধবীদের নিয়ে বাজার করতে এসে পুরো ঘটনাটা দেখে। শফিকের অপমানিত মুখটা তার মনে দাগ কাটে। সে আরমানের অহংকারে আঘাত করার জন্য বলে ওঠে, "শহরের হেয়ার কাটিং কি শুধু তোমরাই জানো? শফিক ভাই তোমাদের চেয়েও ভালো কাটিং দিতে পারে।" আরমান এই কথাটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয় এবং চেয়ারম্যানকে দিয়ে ঘোষণা করায়, "ঈদের দিন বিকেলে বিচার বসবে। শফিক যদি আমার মতো 'আন্ডারকাট ফেড' স্টাইল করে গ্রামের যেকোনো একজনকে বদলে দিতে পারে, তাহলে তাকে দশ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। আর যদি না পারে, তাহলে তাকে এই সেলুন বন্ধ করে গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে হবে।" নিরীহ শফিকের উপর যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। ভালোবাসা প্রমাণ করতে গিয়ে এখন তার অস্তিত্বই হুমকির মুখে।
দ্বিতীয় পর্ব: ষড়যন্ত্রের জাল আর শ্রাবণীর গোপন সাহায্য
চ্যালেঞ্জের কথা শুনে শফিকের রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়। তার একমাত্র ভরসা ইউটিউব, কিন্তু গ্রামের দুর্বল নেটওয়ার্কে ভিডিও বাফারিং হতেই সারারাত কেটে যায়। সে তার সবচেয়ে কাছের বন্ধু আক্কাসকে মডেল বানিয়ে চুল কাটা প্র্যাকটিস করতে গিয়ে তার চুলের যা অবস্থা করে, তা দেখে আক্কাস কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। একদিকে আরমানের ভয়ংকর চ্যালেঞ্জ, অন্যদিকে বন্ধুর চুলের করুণ দশা শফিক প্রায় হাল ছেড়ে দেওয়ার পর্যায়ে। কিন্তু সে জানতো না, আড়াল থেকে কেউ একজন তাকে সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত।
গভীর রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে, তখন শ্রাবণী গোপনে করে শফিকের জন্য একটি শক্তিশালী 4G পকেট রাউটার আর একটা পাওয়ার ব্যাংক তার সেলুনের জানালার পাশে রেখে যায়, সাথে একটা ছোট্ট চিরকুট: "বিশ্বাস হারাবেন না, আমি জানি আপনিই জিতবেন।" এই ছোট্ট চিরকুট আর শ্রাবণীর অপ্রত্যাশিত সাহায্য শফিকের মনে যেন নতুন করে একশো হাতির বল এনে দেয়। সে সারারাত জেগে ইউটিউবের টিউটোরিয়াল দেখে, চিরুনি আর কাঁচি দিয়ে কল্পনায় প্র্যাকটিস করে। সে বুঝতে পারে, এই লড়াইটা শুধু তার একার নয়, এই লড়াইয়ের সাথে শ্রাবণীর সম্মানও জড়িয়ে আছে। অন্যদিকে, শয়তান আরমান বুঝতে পারে শফিক সহজে হার মানবে না। তাই সে নতুন ষড়যন্ত্রের জাল বোনে। সে গ্রামের বিদ্যুৎ অফিসের লাইনম্যানকে টাকা দিয়ে হাত করে, যাতে ঈদের দিন ঠিক প্রতিযোগিতার সময় পুরো গ্রামের বিদ্যুৎ চলে যায় এবং শফিক তার ইলেকট্রিক ট্রিমার ব্যবহার করতে না পারে।
তৃতীয় পর্ব: চূড়ান্ত মুহূর্ত এবং ভয়ংকর বিপদ
ঈদের দিন বিকেল। গ্রামের স্কুল মাঠে বিচার বসেছে। একদিকে দামি চেয়ারে আরমান ও চেয়ারম্যান সাহেব, অন্যদিকে ভয়ে কাঁপতে থাকা শফিক তার মডেল আক্কাসকে নিয়ে দাঁড়িয়ে। শফিকের হাতে আধুনিক ট্রিমার, চোখে জয়ের স্বপ্ন। ঠিক যখন সে ট্রিমারের সুইচ অন করতে যাবে, তখনই ঘটে সেই ভয়ংকর ঘটনা। পুরো গ্রাম অন্ধকারে ডুবে যায়! আরমানের মুখে ফুটে ওঠে এক ক্রুর হাসি। সে বিজয়ের সুরে বলে, "কী হে স্টাইলিস্ট, এখন কী দিয়ে চুল কাটবে? নারকেল ছোবড়া দিয়ে?" গ্রামের সবাই হতাশ হয়ে পড়ে। সবাই ধরে নেয়, শফিকের খেলা এখানেই শেষ।
শফিক স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তার স্বপ্ন, ভালোবাসা, সম্মান সবকিছু যেন এই অন্ধকারের মধ্যে হারিয়ে যেতে বসেছে। শ্রাবণীর মুখটা ভয়ে ফ্যাকাসে হয়ে যায়। সে বুঝতে পারে, এটা কোনো সাধারণ লোডশেডিং নয়, এটা আরমানের নোংরা চাল। শফিকের চোখ দিয়ে পানি পড়ার উপক্রম। কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তে, যখন সবাই আশা ছেড়ে দিয়েছে, তখন শফিকের মনে পড়ে যায় তার বাবার কথা। তার বাবাও গ্রামের নাপিত ছিলেন এবং তিনি বলতেন, "যন্ত্রের কারিগর সবাই হতে পারে, কিন্তু হাতের কারিগর ক'জন হয়?" শফিক তার সরঞ্জাম বাক্স থেকে বের করে আনে তার বাবার রেখে যাওয়া পুরোনো দিনের চকচকে একটা ক্ষুর আর কয়েকটা সাধারণ কাঁচি। তার চোখে এবার ভয়ের বদলে দেখা যায় এক অদম্য জেদ। সে বজ্রকণ্ঠে বলে ওঠে, "আলো দিয়ে তো সবাই স্টাইল করে, আজ আমি অন্ধকারেই স্টাইল করে দেখাব!"
চতুর্থ পর্ব: হাতের জাদু এবং সত্যের জয়
শফিকের এই আত্মবিশ্বাস দেখে পুরো গ্রামের মানুষ স্তব্ধ হয়ে যায়। আরমান হাসতে হাসতে বলে, "পাগল হয়ে গেছে!" কিন্তু শফিক কোনো কথায় কান দেয় না। গ্রামের কয়েকজন যুবক টর্চলাইট আর মোবাইলের ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে তার সামনে ধরে। সেই অল্প আলোতে শফিক তার হাতের জাদু দেখানো শুরু করে। তার হাত চলছিল যেন কোনো দক্ষ শিল্পীর তুলি। কাঁচি আর ক্ষুরের সমন্বয়ে সে যা তৈরি করছিল, তা ছিল এক অবিশ্বাস্য শিল্পকর্ম। সে শুধু আরমানের বলা 'আন্ডারকাট ফেড' স্টাইলই করেনি, তার সাথে গ্রামের ঐতিহ্য মিশিয়ে এক নতুন ডিজাইন তৈরি করে, যা দেখে সবাই মুগ্ধ হয়ে যায়।
এদিকে শ্রাবণী বসে থাকেনি। সে আরমানের ড্রাইভারকে আবেগী কথা বলে রাজি করিয়ে ফেলে সত্যিটা বের করার জন্য। ড্রাইভার, যে আরমানের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিল, সে সবার সামনে স্বীকার করে যে আরমানই লাইনম্যানকে টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ বন্ধ করিয়েছে। এই কথা শোনার সাথে সাথে চেয়ারম্যান সাহেব লজ্জায় ও রাগে ফেটে পড়েন। তিনি আরমানের সাথে শ্রাবণীর বিয়ের প্রস্তাব সঙ্গে সঙ্গে বাতিল করে দেন এবং তাকে গ্রাম থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। ঠিক তখনই গ্রামের বিদ্যুৎ ফিরে আসে এবং সবাই আলোর মধ্যে শফিকের অবিশ্বাস্য শিল্পকর্ম দেখে হাততালি দিয়ে ওঠে। আক্কাসের মাথায় চুল নয়, যেন এক নতুন তাজমহল শোভা পাচ্ছিল!
শেষ পর্ব: ঈদের সেরা উপহার এবং ভালোবাসার পূর্ণতা
শফিক শুধু প্রতিযোগিতায় জেতেনি, সে গ্রামের সবার মন জয় করে নিয়েছে। চেয়ারম্যান সাহেব নিজের ভুল বুঝতে পেরে শফিকের কাছে ক্ষমা চান এবং পুরস্কারের দশ হাজার টাকার সাথে আরও দশ হাজার টাকা দিয়ে বলেন, "আজ থেকে তুমি শুধু আমার গ্রামের নাপিত নও, তুমি আমার হবু জামাই।" এই কথা শুনে শফিক ও শ্রাবণী লজ্জায় লাল হয়ে যায়। নাটকের শেষ দৃশ্যে দেখা যায়, ঈদের সন্ধ্যায় শফিক ও শ্রাবণী নদীর পাড়ে বসে আছে। শ্রাবণী শফিকের হাত ধরে বলে, "আমার জীবনের সেরা হেয়ার স্টাইলিস্ট তো আপনিই।" শফিক মৃদু হেসে শ্রাবণীর কানের পাশে থাকা একটি অবাধ্য চুল আলতো করে সরিয়ে দিয়ে বলে, "আর আমার জীবনের সেরা ঈদ উপহার হলে তুমি।" তাদের মুখে ছিল প্রাপ্তির হাসি, যা হাজারো ষড়যন্ত্রকে পেছনে ফেলে ভালোবাসার শক্তিতে অর্জিত হয়েছে। যে সেলুনটি ছিল মুরগির খোপ, সেটিই হয়ে ওঠে তাদের ভালোবাসার সাক্ষী।
ডিসক্লেইমার: এই গল্পটি নাটকের থিমের উপর ভিত্তি করে একটি কল্পিত রচনা। থাম্বনেইলটি শুধুমাত্র তথ্য পরিবেশনের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে।
শফিকের আত্মবিশ্বাস এবং শ্রাবণীর নিঃস্বার্থ ভালোবাসা দিয়ে ষড়যন্ত্রকে হারানোর এই গল্পটি আপনার কেমন লাগলো? আপনি কি মনে করেন, সত্যিকারের প্রতিভা এবং সততা থাকলে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সম্ভব? আপনার মূল্যবান মতামত নিচের কমেন্ট বক্সে আমাদের সাথে শেয়ার করুন। আপনার প্রতিটি মন্তব্যই আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা!