Hridoye Rekhechi Gopone (2025) | হৃদয়ে রেখেছি গোপনে | Yash Rohan & Totini | Full Bangla Natok Story (Best for direct searches)

Hridoye Rekhechi Gopone | হৃদয়ে রেখেছি গোপনে | Yash Rohan | Totini | Full Natok | Eid Natok 2025

Hridoye Rekhechi Gopone | Yash Rohan | Tanjim Saira Totini হৃদয়ে রেখেছি গোপনে | New Eid Natok 2025

ভূমিকা: নিঃশব্দে আগলে রাখা এক অসমাপ্ত প্রেম

কিছু ভালোবাসা ঝড়ের মতো এসে জীবনকে এলোমেলো করে দেয়, আবার কিছু ভালোবাসা নদীর মতো শান্ত, যা নীরবে বয়ে চলে হৃদয়ের গভীরে। "হৃদয়ে রেখেছি গোপনে" নাটকটি দ্বিতীয় ঘরানার এক ভালোবাসার গল্প। এটি এমন এক প্রেমের উপাখ্যান, যেখানে ত্যাগ, অভিমান আর লুকানো অনুভূতিগুলোই প্রধান চরিত্র। গল্পটি আবর্তিত হয়েছে দুটি মানুষকে ঘিরে, যারা পরিস্থিতির শিকার হয়ে একে অপরের থেকে দূরে সরে গেলেও নিয়তি বারবার তাদের মুখোমুখি এনে দাঁড় করায়। ইয়াশ রোহান এবং তানজিম সায়ারা তোতিনি অভিনীত এই নাটকটি দর্শকদের এমন এক জগতে নিয়ে যাবে, যেখানে ভালোবাসা মানে শুধু প্রকাশ করা নয়, বরং কাউকে গোপনে আগলে রাখাও এক চরম আত্মত্যাগ।

প্রথম অধ্যায়: ক্যানভাসে আঁকা স্বপ্ন আর ভাঙা প্রতিচ্ছবি

আয়ান (ইয়াশ রোহান) একজন প্রতিভাবান চিত্রশিল্পী, যার জীবনটা ক্যানভাস আর রঙের মাঝেই সীমাবদ্ধ। তার ছবিতে যেমন গভীরতা থাকে, তার ব্যক্তি জীবন ঠিক ততটাই নিঃসঙ্গ। পাঁচ বছর আগে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় সে তার ভালোবাসার মানুষ এবং বাগদত্তা নীলাকে হারানোর পর থেকে নিজেকে পুরোপুরি গুটিয়ে নিয়েছে। তার পৃথিবীজুড়ে এখন শুধুই অতীতের স্মৃতি আর নীলার শেষ অসমাপ্ত একটি পোর্ট্রেট। অন্যদিকে, গল্পের নায়িকা নদী (তানজিম সায়ারা তোতিনি) একজন উদ্যমী এবং হাসিখুশি মেয়ে, যে একটি ছোট ক্যাফে চালিয়ে নিজের ও পরিবারের স্বপ্ন পূরণ করার লড়াইয়ে নেমেছে। নদী আয়ানের শিল্পকর্মের একজন বড় ভক্ত। সে প্রায়ই দূর থেকে আয়ানের স্টুডিওর দিকে তাকিয়ে থাকে, কিন্তু কখনো কথা বলার সাহস করে উঠতে পারেনি।

তাদের দুজনের পথের প্রথম মিলন ঘটে একটি আর্ট এক্সিবিশনে। নদী তার জমানো টাকা দিয়ে আয়ানের একটি পেইন্টিং কেনে, যা ছিল একাকিত্বের প্রতিচ্ছবি। পেইন্টিংটি কেনার সময় আয়ানের সাথে তার চোখাচোখি হয়। আয়ান অবাক হয়ে দেখে, যে মেয়েটি তার সবচেয়ে বিষণ্ণ ছবিটি কিনলো, তার চোখেমুখে রাজ্যের আনন্দ। কৌতূহলবশত আয়ান নদীর পরিচয় জানতে চায়। সেদিনই তাদের প্রথম কথা হয়। নদী বলেছিল, "আপনার ছবিতে যে একাকিত্ব আছে, আমি তার সঙ্গী হতে চাই।" এই একটি কথাই আয়ানের পাথর হৃদয়ে নাড়া দিয়ে যায়। এরপর থেকে প্রায়ই আয়ান নদীর ক্যাফেতে আসত এবং ঘণ্টার পর ঘণ্টা নীরবে বসে কফি খেত, যা তাদের মধ্যে এক অব্যক্ত সম্পর্ক তৈরি করে।

দ্বিতীয় অধ্যায়: সন্দেহের কালো মেঘ ও দূরত্বের সূচনা

ধীরে ধীরে আয়ান নদীর সরলতা এবং প্রাণবন্ত স্বভাবের প্রেমে পড়তে শুরু করে। সে অনুভব করে, নদীই সেই মানুষ যে তার ধূসর জীবনে রঙের ছোঁয়া এনে দিতে পারে। একদিন সাহস করে আয়ান নদীকে তার ভালোবাসার কথা জানায় এবং তার অসমাপ্ত জীবনের ক্যানভাসে নতুন করে রংতুলি হতে আমন্ত্রণ জানায়। নদীও রাজি হয়ে যায়, কারণ সে প্রথম দিন থেকেই আয়ানকে মনে মনে ভালোবেসেছিল। কিন্তু তাদের এই সুখের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় আয়ানের অতীত। নীলার বড় ভাই আরশান (নাম উল্লেখ করা হয়নি, তবে একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব) কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিল না যে আয়ান তার বোনের জায়গা অন্য কাউকে দিক।

আরশান পরিকল্পিতভাবে নদীর মনে আয়ানের প্রতি সন্দেহ তৈরি করার চেষ্টা করে। সে নদীকে কিছু পুরোনো ছবি এবং চিঠি দেখায়, যা প্রমাণ করে যে আয়ান এখনও নীলার স্মৃতিতে ডুবে আছে এবং নদীকে সে কেবল নিজের একাকিত্ব কাটানোর জন্য ব্যবহার করছে। একটি ছবিতে দেখা যায়, আয়ান গভীর রাতে নীলার কবরের পাশে বসে কাঁদছে। এই দৃশ্যগুলো দেখে নদীর বিশ্বাস ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। সে আয়ানকে ভুল বোঝে এবং মনে করে, আয়ানের হৃদয়ে তার কোনো স্থান নেই। এক সন্ধ্যায়, নদী আয়ানকে বলে, "যে হৃদয়ে অন্য কেউ বাস করে, সেখানে আমি অতিথি হয়ে থাকতে পারব না।" এই বলে সে আয়ানের জীবন থেকে নীরবে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আয়ান তাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলেও অভিমানী নদী আর পেছনে ফিরে তাকায়নি।

তৃতীয় অধ্যায়: নিয়তির খেলা এবং এক ভয়ংকর সত্যের উন্মোচন

গল্প মোড় নেয় দুই বছর পর। আয়ান এখন আরও বেশি বিধ্বস্ত। সে ছবি আঁকা প্রায় ছেড়েই দিয়েছে। অন্যদিকে, নদী তার ক্যাফে ছেড়ে একটি বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি নিয়েছে, কিন্তু তার হাসিটা কোথাও যেন হারিয়ে গেছে। একদিন অফিসের কাজে নদীকে এমন একটি প্রজেক্টের দায়িত্ব দেওয়া হয়, যা ছিল আয়ানের বাবার কোম্পানির সাথে যুক্ত। নিয়তি আবার তাদের মুখোমুখি দাঁড় করায়। পুরনো স্মৃতি, অভিমান আর না বলা কথাগুলো তাদের দুজনকেই তাড়িয়ে বেড়াতে থাকে।

এই নাটকের সবচেয়ে সাসপেন্সপূর্ণ মুহূর্তটি আসে যখন নদীর বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তার হার্ট ট্রান্সপ্লান্টের প্রয়োজন হয়। ডোনার খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না, এবং হাসপাতালের খরচও ছিল অনেক। ঠিক সেই মুহূর্তে এক অচেনা ব্যক্তি এগিয়ে এসে সমস্ত চিকিৎসার দায়িত্ব নেয় এবং ডোনারের ব্যবস্থাও করে দেয়। নদী যখন সেই ব্যক্তির পরিচয় জানতে চায়, তখন হাসপাতালের এক ডাক্তার তার হাতে একটি ডায়েরি তুলে দেন। ডায়েরিটি ছিল আয়ানের। ডায়েরিটি পড়ে নদী জানতে পারে, পাঁচ বছর আগের দুর্ঘটনায় নীলার ব্রেন ডেথ হলেও তার হার্টটি ট্রান্সপ্লান্ট করা হয়েছিল নদীরই ছোটবোনের শরীরে, যা আয়ানের অনুরোধে গোপন রাখা হয়েছিল। আয়ান এতদিন ধরে গোপনে নদীর পরিবারের খোঁজখবর রাখত, কারণ নদীর মাঝে সে তার হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসার অস্তিত্ব খুঁজে পেত। আর আরশান এই সত্যটা প্রকাশ করতে চায়নি, কারণ সে চায়নি তার বোনের হৃৎপিণ্ড অন্য কারো শরীরে বেঁচে থাকুক। আয়ান তাকে হুমকি দিয়েছিল যে, সে যদি নদীর কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করে, তবে আয়ান এই সত্য ফাঁস করে দেবে।

সবচেয়ে বড় সত্যটি ছিল, নদীর বাবার হার্ট ডোনার আর কেউ নয়, স্বয়ং আয়ানের বাবা, যিনি নিজের একমাত্র ছেলেকে তার ভালোবাসা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য এই চরম আত্মত্যাগ করেছেন। এই সত্য জানার পর নদীর পৃথিবী থমকে যায়। সে বুঝতে পারে, কত বড় ভুল সে করেছে। আয়ানের ভালোবাসা ছিল নিঃস্বার্থ, যা সে কখনো বোঝার চেষ্টাই করেনি।

শেষ অধ্যায়: অনুশোচনার অশ্রু এবং ভালোবাসার পুনঃপ্রতিষ্ঠা

নদী ছুটে যায় আয়ানের কাছে, যে তখন তার বাবার পাশে হসপিটালে বসে ছিল। নদীকে দেখে আয়ান কিছু বলার আগেই নদী তার পায়ে পড়ে যায় এবং কান্নায় ভেঙে পড়ে। সে বলে, "আমি তোমার ভালোবাসার গভীরতা মাপতে গিয়ে নিজেই হারিয়ে গিয়েছিলাম। আমাকে শুধু একবার ক্ষমা করে দাও।" আয়ান নদীকে তুলে ধরে এবং তার চোখের জল মুছে দিয়ে বলে, "আমি তো তোমাকে কখনোই হারাইনি। কারণ, তোমাকে তো আমি সবসময় হৃদয়ে রেখেছি গোপনে।" নাটকের শেষ দৃশ্যে দেখা যায়, আয়ান তার অসমাপ্ত সেই পোর্ট্রেটটি শেষ করছে, যেখানে নীলার মুখের অবয়বের পাশে ফুটে উঠেছে নদীর প্রতিচ্ছবি। যে ভালোবাসা একদিন স্মৃতি আর অভিমানে ঢেকে গিয়েছিল, তা সব বাধা পেরিয়ে অবশেষে এক নতুন ভোরের আলো খুঁজে পায়। এটি শুধু দুটি মানুষের মিলনের গল্প নয়, এটি ত্যাগের মহিমায় উজ্জ্বল এক অমর প্রেমের আখ্যান।

আয়ান ও নদীর এই আবেগঘন এবং ত্যাগের গল্পটি আপনার কেমন লাগলো? আপনি কি মনে করেন,রিয়াল ভালোবাসা কখনো প্রকাশ করার প্রয়োজন হয় না, তা নীরবেই নিজের দায়িত্ব পালন করে যায়? আপনার মূল্যবান মতামত নিচের কমেন্ট বক্সে আমাদের সাথে শেয়ার করুন। আপনার প্রতিটি মন্তব্যই আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা!

ডিসক্লেমার: এই গল্পটি নাটকের কাহিনীর উপর ভিত্তি করে একটি কল্পিত রচনা। থাম্বনেইলটি শুধুমাত্র তথ্য পরিবেশনের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.