আই প্লাস ইউ - I + U Bangla Natok | Yash Rohan, Tanjim Saira Totini | Eid Natok 2024

I + U | আই প্লাস ইউ | Yash Rohan | Tanjim Saira Totini | Eid Natok | New Bangla Natok 2024

I + U | Yash Rohan | Tanjim Saira Totini আই প্লাস ইউ | Eid Natok | New Bangla Natok 2024

ভূমিকা: এক ছাদের নিচে দুই পৃথিবীর বসবাস!

আচ্ছা, আপনার জীবনে কি কখনো এমন কেউ এসেছে, যে আপনার সাজানো গোছানো পৃথিবীটাকে এক মুহূর্তে তছনছ করে দিয়েছে? যার আগমনে আপনার সব নিয়মকানুন, সব হিসেব নিকেশ হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে? "আই প্লাস ইউ" নাটকটি ঠিক এমনই এক গল্পের ঝাঁপি খুলে বসেছে। এখানে একপাশে আছে গণিতের খাতার মতো পরিপাটি, চুপচাপ স্বভাবের আবির (ইয়াশ রোহান), আর অন্যপাশে উড়নচণ্ডী প্রজাপতির মতো জীবন কাটানো প্রাণবন্ত নদী (তানজিম সায়ারা তোতিনি)। যখন এই দুই ভিন্ন গ্রহের বাসিন্দা ভাগ্যচক্রে এক ছাদের নিচে এসে পড়ে, তখন কী হয়? সংঘাত নাকি ভালোবাসা? নাকি সংঘাতের পথ ধরেই ভালোবাসার জন্ম? চলুন, ডুব দেওয়া যাক এই মিষ্টিমধুর রোলার কোস্টার রাইডের গল্পে।

পর্ব ১: কাঁটায় কাঁটায় জীবন বনাম উড়নচণ্ডী প্রজাপতি

গল্পের আবিরকে দেখলে আপনার মনে হবে, মানুষটা বুঝি ক্যালেন্ডার আর ঘড়ি ছাড়া আর কিছুই চেনে না। তার ফ্ল্যাটের প্রত্যেকটা জিনিস নিখুঁত জায়গায় সাজানো। একটা বইও যদি এক ইঞ্চি এদিক ওদিক হয়, আবিরের রাডারে সেটা ধরা পড়ে যায়! নিজের একার এই শান্ত, শব্দহীন পৃথিবীতে সে বেশ ভালোই ছিল। কিন্তু তার এই শান্তির রাজ্যে হঠাৎ করেই পারমাণবিক বোমার মতো আছড়ে পড়ল নদী। এক লাগেজ ভর্তি স্বপ্ন আর আরেক লাগেজ ভর্তি অগোছালো জিনিসপত্র নিয়ে নদী এসে হাজির হলো আবিরের ফ্ল্যাটে, পেইং গেস্ট হিসেবে। প্রথম দিনেই সে আবিরের সাজানো ড্রয়িং রুমকে বানিয়ে ফেলল second hand জিনিসপত্রের দোকান!

আবির তো রেগে কাঁই! সে নদীকে লম্বা এক লিস্ট ধরিয়ে দিল—এখানে জোরে গান শোনা যাবে না, ওখানে ভেজা তোয়ালে রাখা যাবে না, रात দশটার পর কোনো আওয়াজ করা যাবে না, ইত্যাদি ইত্যাদি। কি ভাবছেন? নদী সব শুনে লক্ষ্মী মেয়ের মতো সব মেনে নিল? একদমই না! সে আবিরের সব নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিজের মতো করেই চলতে শুরু করল। আবিরের কপালে ভাঁজ পড়ল, আর দর্শকদের মুখে ফুটল হাসি। তাদের এই অম্লমধুর খুনসুটি আর ছোট ছোট ঝগড়াগুলোই গল্পের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে দিল। একদিন তো আবির বলেই বসল, "আচ্ছা, আপনি কি ফ্ল্যাটে থাকতে এসেছেন নাকি আমার জীবনটাকে নরক বানাতে?" নদীর চটপটে উত্তর ছিল, "দুটোই বোনাস হিসেবে ধরে নিন!"

পর্ব ২: কঠিন খোলসের আড়ালে এক ভাঙা মন

নদী প্রথম প্রথম আবিরের এই খিটখিটে স্বভাব দেখে ভীষণ বিরক্ত হতো। কিন্তু धीरे धीरे সে টের পেতে শুরু করল, এই মানুষটার কঠিন ব্যবহারের আড়ালে অন্যকিছু লুকিয়ে আছে। আবিরের এত নিয়মকানুনের বাড়াবাড়ি আসলে একধরনের অবরোধ, যা দিয়ে সে নিজেকে বাইরের পৃথিবী থেকে আড়াল করে রেখেছে। এই রহস্যের জট খুলতে শুরু করে এক গভীর রাতে। সেদিন নদী হঠাত করেই ঘুম ভেঙে দেখে, আবির বারান্দার এক কোণে চুপচাপ বসে আছে। তার হাতে একটা পুরোনো ডায়েরি, আর তার চোখ দিয়ে অঝোরে জল পড়ছে। রাতের নিস্তব্ধতায় একটা মানুষের এমন silent কান্না নদীর বুকের ভেতরটা নাড়িয়ে দিয়ে গেল।

সেদিন নদী প্রথম বুঝতে পারল, আবিরের এই শক্ত খোলসের ভেতরে একটা ভীষণ একা আর আহত শিশু বাস করে। জানা যায়, ওই ডায়েরিটা ছিল আবিরের প্রয়াত মায়ের। পারিবারিক এক তিক্ত অতীত তাকে এতটা চুপচাপ আর অসামাজিক করে তুলেছে। এরপর থেকে নদীর দৃষ্টিভঙ্গি পুরোপুরি পাল্টে যায়। সে আর আবিরকে রাগানোর জন্য কিছু করে না, বরং তার একাকীত্ব কাটানোর চেষ্টা করে। তার জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে যায়, তার অগোছালো ঘরটা নিজের হাতে গুছিয়ে দেয়, কখনো বা बेवजह বকবক করে তার নীরবতা ভাঙতে চায়। নদীর এই নরম ছোঁয়াগুলো আবিরের কঠিন বরফের দেয়ালে একটু একটু করে চিড় ধরাতে শুরু করে।

পর্ব ৩: একটা ছোট্ট ভুল, আর তারপর?

ঠিক যখন তাদের সম্পর্কটা একটা মিষ্টি দিকে মোড় নিচ্ছিল, তখনই একটা ঝড় সব ওলটপালট করে দিল। আবিরকে আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য, তার কষ্টের কারণটা জানার জন্য নদী একদিন আবিরের মায়ের সেই ডায়েরিটা হাতে তুলে নেয়। তার মনে কোনো খারাপ উদ্দেশ্য ছিল না, ছিল শুধু আবিরের প্রতি একরাশ মায়া। কিন্তু বিধি বাম! আবির ঠিক সেই মুহূর্তেই ঘরে ফিরে আসে এবং নদীকে তার সবচেয়ে ব্যক্তিগত জিনিসটা পড়তে দেখে ফেলে। আবিরের পৃথিবীটা যেন এক মুহূর্তে জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে গেল! তার সবচেয়ে গোপন, সবচেয়ে বেদনাদায়ক একটা জায়গায় কেউ এভাবে আঘাত করতে পারে, এটা সে ভাবতেও পারেনি।

তার শান্ত কণ্ঠস্বরে যেন আজ আগ্নেয়গিরি জেগে উঠল। সে নদীকে এমন কিছু কথা শুনিয়ে দিল যা নদীর অন্তরকে ছিন্নভিন্ন করে দেয়। নদীর চোখের জল, তার বারবার ক্ষমা চাওয়া কোনোকিছুই আবিরের ক্রোধকে শান্ত করতে পারল না। তাদের মধ্যে হঠাৎ করেই যেন যোজন যোজন দূরত্ব তৈরি হয়ে গেল। যে ফ্ল্যাটটা নদীর কলকাকলিতে মুখর হয়ে উঠেছিল, সেটা আবার আগের মতো প্রাণহীন, কবরের মতো শান্ত হয়ে গেল। নদী বুঝতে পারল, এই বাড়িতে তার আর জায়গা নেই।

পর্ব ৪: অনুশোচনার আগুনে পুড়ে খাঁটি হওয়ার গল্প

বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার আগে নদী শেষবারের মতো আবিরের জন্য একটা চিঠি লিখে রেখে যায়। তাতে কোনো অভিযোগ ছিল না, ছিল শুধু নিজের ভুলের জন্য একরাশ ক্ষমা আর একটা সরল স্বীকারোক্তি। সে লিখেছিল, "আমি আপনার কষ্টের ভাগ নিতে চেয়েছিলাম, কষ্ট বাড়াতে চাইনি। আপনার গোছানো জীবনে আমি একটা ঝড় হয়ে এসেছিলাম, এবার সেই ঝড় থেমে যাওয়ার সময় হয়েছে।" চিঠিটা যখন আবির পড়ল, তখন তার ভেতরের সমস্ত রাগ, সমস্ত অভিমান যেন বরফগলা জলের মতো বেরিয়ে গেল। প্রতিটি শব্দ তার বুকে ধারালো ছুরির মতো বিঁধছিল।

সেদিন আবির প্রথম আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে প্রশ্ন করল—সে কি সত্যি চায় নদী চলে যাক? উত্তরটা তার মন খুব ভালো করেই জানত। সে বুঝতে পারল, নদীর ওই অগোছালো ভালোবাসাটাই তার জীবনের সবচেয়ে গোছানো প্রাপ্তি ছিল। সে তার নিজের তৈরি করা অতীতের কারাগারে এতটাই বন্দি ছিল যে, বর্তমানের এই নিঃস্বার্থ ভালোবাসাটাকেও চিনতে ভুল করেছে। নিজের ভুলের আগুনে পুড়তে পুড়তে আবির পাগলের মতো ছুটে বেরোল নদীকে খুঁজে বের করার জন্য। কারণ সে জানত, এই ঝড় থেমে গেলে তার জীবনটা আগের থেকেও বেশি শূন্য হয়ে যাবে।

শেষ পর্ব: "আমি" আর "তুমি" যখন "আমরা"

নাটকের সবচেয়ে আবেগঘন মুহূর্ত ছিল এটাই। আবির বাসস্ট্যান্ডে নদীকে ঠিক খুঁজে বের করল, যখন সে একা বাসে উঠে পড়ছিল। আবির তার সামনে গিয়ে দাঁড়াল, কোনো ভূমিকা ছাড়াই সরাসরি বলল, "আমার জীবনে যা কিছু এলোমেলো ছিল, তুমি এসে সব গুছিয়ে দিয়েছ। আর আমি তোমাকেই চলে যেতে বলছিলাম! এতটা বোকা আমি কী করে হতে পারলাম?" তার কণ্ঠস্বরে ছিল স্পষ্ট অনুশোচনা আর ভয়। সে নদীর হাত ধরে বলল, "আমার পৃথিবীটা এতদিন শুধু 'আমি' ছিলাম। তুমি এসে শিখিয়েছ 'তুমি' বলেও কিছু হয়। এবার 'আমি' আর 'তুমি' মিলে একটা 'আমরা' হয়ে বাঁচা যায় না?"

আবিরের ভেতরের শিশুটাকে সেদিন নদী স্পষ্ট দেখতে পেল। সব অভিমান ভুলে সে আবিরের হাতটা আরও শক্ত করে ধরল। নাটকের শেষে দেখা যায়, আবিরের ফ্ল্যাটটা এখনো পরিপাটি, কিন্তু সেখানে এখন প্রাণের ছোঁয়া আছে। সেখানে এখন দুটো কফির মগ, দুটো মানুষের হাসি, আর একরাশ ভালোবাসা মিলেমিশে একাকার। যে গল্পটা শুরু হয়েছিল দুটি নামের আদ্যক্ষর ‘I’ আর ‘U’ দিয়ে, সেই গল্পটা শেষ হলো ভালোবাসার একটা সম্পূর্ণ শব্দ ‘US’ দিয়ে।

আবির আর নদীর এই অসাধারণ ভালোবাসার জার্নিটা আপনার মনে কতটা দাগ কাটল? কঠিন সময়ের দেয়াল ভেঙে সত্যিকারের ভালোবাসা কি এভাবেই জেতে? আপনার মনের কথাগুলো নিচের কমেন্ট বক্সে উজাড় করে দিন। আপনার প্রতিটি মতামতই আমাদের এগিয়ে চলার শক্তি!

ডিসক্লেমার: এই গল্পটি নাটকের কাহিনীর উপর ভিত্তি করে একটি কল্পিত রচনা। থাম্বনেইলটি শুধুমাত্র তথ্য পরিবেশনের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.