Kotha Chilo Natok Review | কথা ছিল - ইয়াশ ও তোতিনির না বলা ভালোবাসার গল্প | New Bangla Natok 2024
ভূমিকা: কিছু কথা যা বলার ছিল, কিন্তু বলা হলো না
জীবনের কিছু সম্পর্ক ঠিক যেন অসময়ে ফোটা একগুচ্ছ হাসনাহেনা ফুলের মতো, যার সুবাস থাকে কিন্তু স্থায়িত্ব থাকে না। কিছু অনুভূতি এমনভাবে হৃদয়ের গভীরে জন্মায়, যা প্রকাশ করার আগেই হারিয়ে যায় সময়ের স্রোতে। "কথা ছিল" নাটকটি ঠিক এমনই এক না বলা ভালোবাসার গল্প, যেখানে দুটি মন একে অপরের খুব কাছে এসেও কর্তব্য, দায়িত্ব আর বাস্তবতার কঠিন বেড়াজালে আটকে যায়। এই গল্প আয়মান (ইয়াশ রোহান) এবং রিয়া'র (তানজিম সায়ারা তোতিনি) সেই অসম্পূর্ণ সফরের উপাখ্যান, যা দর্শকদের ভাবাবে, মন খারাপ করাবে এবং একই সাথে এক মিষ্টি অনুভূতিতে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। এটি শুধু একটি প্রেমের গল্প নয়, এটি হলো সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারার এক চিরন্তন আক্ষেপের প্রতিচ্ছবি।
প্রথম পর্ব: অভ্যাসের শহরে এক অচেনা হাওয়া
গল্পের নায়ক আয়মান একজন সফল আর্কিটেক্ট, যে তার দীর্ঘদিনের প্রেমিকা শ্রেয়ার সাথে সম্পর্কটাকে এক প্রকার অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছে। তাদের সম্পর্কে ভালোবাসা হয়তো আছে, কিন্তু সেই পুরোনো আবেগ বা উত্তেজনাটা আর নেই। সবকিছুই যেন একটা যান্ত্রিক নিয়মের মতো চলছিল। শ্রেয়া আয়মানের জীবনে এক অনিবার্য বাস্তবতা, যাকে অস্বীকার করার উপায় নেই। এই নিস্তরঙ্গ জীবনে এক দমকা হাওয়া হয়ে আসে আয়মানের নতুন সহকর্মী রিয়া। রিয়া প্রাণবন্ত, হাসিখুশি আর ঠিক যেন আয়মানের মনের গভীরে থাকা অপূর্ণ সত্তার এক আয়না। অফিসের প্রজেক্টের কাজে তাদের একসাথে অনেকটা সময় কাটাতে হয়, আর এই পেশাগত আলাপচারিতা কখন যে ব্যক্তিগত নির্ভরশীলতায় রূপ নেয়, তা তারা নিজেরাও টের পায় না।
তাদের মধ্যেকার সম্পর্কটা গভীর হতে শুরু করে প্রতিদিন অফিস থেকে ফেরার পথে গাড়িতে। যানজটে আটকে থাকা বিরক্তিকর সময়গুলোও তাদের জন্য হয়ে ওঠে দিনের সেরা মুহূর্ত। গান শোনা, ছোট ছোট স্বপ্ন নিয়ে কথা বলা আর একে অপরের না বলা কষ্টগুলো বুঝে ফেলার এক অদ্ভুত ক্ষমতা তাদের মধ্যে তৈরি হয়। আয়মান আবিষ্কার করে, রিয়া'র সাথে কথা বললে তার ভেতরের সব দ্বিধা, সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। অন্যদিকে, রিয়াও আয়মানের পরিণত, স্থির ব্যক্তিত্বের মধ্যে নিজের জন্য এক নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পায়। তাদের মধ্যে কোনো প্রতিশ্রুতির কথা ছিল না, কিন্তু মনের অজান্তেই তারা একে অপরের জন্য অপেক্ষা করতে শুরু করে।
দ্বিতীয় পর্ব: অব্যক্ত অনুভূতি ও এক কাপ কফির উষ্ণতা
সম্পর্কের গভীরতা বাড়তে থাকে छोटी छोटी মুহূর্তে। একদিন প্রচণ্ড বৃষ্টিতে অফিস শেষে আয়মান আর রিয়া এক কফি শপে আশ্রয় নেয়। বাইরের মুষলধারে বৃষ্টির শব্দের সাথে তাদের নীরবতা এক অন্যরকম আবহ তৈরি করে। সেদিন কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে রিয়া হুট করে জিজ্ঞেস করে, "আপনার জীবনে এমন কোনো ইচ্ছে আছে যা কখনও পূরণ হবে না জেনেও আপনি সেটা নিয়ে ভাবেন?" আয়মানের বুকটা ছ্যাঁৎ করে ওঠে। তার বলতে ইচ্ছে করে, "আমার সেই অপূর্ণ ইচ্ছেটা তো তুমি।" কিন্তু সে বলতে পারে না। শুধু মৃদু হেসে বলে, "সবারই থাকে।"
সেইদিন থেকে আয়মান এক তীব্র মানসিক দ্বন্দ্বে ভুগতে শুরু করে। একদিকে শ্রেয়ার প্রতি তার দায়িত্ববোধ, দীর্ঘদিনের একটা সম্পর্ককে সম্মান জানানো, আর অন্যদিকে রিয়া'র জন্য তার ভেতর তৈরি হওয়া এক অপ্রতিরোধ্য টান। সে বুঝতে পারছিল, সে যা করছে তা নৈতিকভাবে ঠিক নয়, কিন্তু রিয়া'র সঙ্গ তার কাছে অক্সিজেনের মতো জরুরি হয়ে উঠছিল। রিয়াও আয়মানের এই মানসিক অবস্থাটা বুঝত। সে কখনও কোনো অভিযোগ করত না, কোনো দাবিও করত না। শুধু নীরবে তার পাশে থেকে যেত, ঠিক যেমনটা আয়মানের প্রয়োজন ছিল। তাদের সম্পর্কটা ছিল এক খোলা আকাশের মতো, যেখানে মেঘ জমে কিন্তু বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ার অধিকার থাকে না।
তৃতীয় পর্ব: যখন বাস্তবতা দরজায় কড়া নাড়ে
নাটকের গল্প মোড় নেয় যখন শ্রেয়া তার এবং আয়মানের বিয়ের জন্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়। দুই পরিবার মিলে বিয়ের দিন তারিখ পাকা করে ফেলে। খবরটা আয়মানের মাথায় যেন বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো আঘাত হানে। সে কোনোভাবেই এই বিয়েতে মন থেকে সায় দিতে পারছিল না। তার মনে হচ্ছিল, সে একসাথে দুটি মানুষের জীবন নষ্ট করতে চলেছে। সেই রাতে সে রিয়াকে ফোন করে সবকিছু খুলে বলে। ফোনের ওপারে রিয়া অনেকক্ষণ চুপ করে থাকে। তারপর খুব শান্ত গলায় বলে, "যা হওয়ার কথা ছিল, তাই তো হচ্ছে। এটাই তো স্বাভাবিক, তাই না?" রিয়ার এই শান্ত কণ্ঠের আড়ালে যে কত বড় একটা ঝড় বয়ে যাচ্ছিল, তা আয়মান স্পষ্ট বুঝতে পারছিল।
পরদিন অফিসে রিয়া এমনভাবে আচরণ করে যেন কিছুই হয়নি। কিন্তু তার চোখের নিচের কালি আর জোর করে মুখে ধরে রাখা হাসিটা আয়মানের দৃষ্টি এড়ায় না। আয়মান ঠিক করে, তাকে একটা সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। সে শ্রেয়ার সাথে কথা বলতে যায়, কিন্তু শ্রেয়ার চোখে বিয়ের স্বপ্ন আর উচ্ছ্বাস দেখে তার মুখ থেকে কোনো কথা বের হয় না। সে বুঝতে পারে, এই মুহূর্তে সত্যটা বলার মতো সাহস তার নেই। সে শুধু নিজের ভেতরের যন্ত্রণাকে লুকিয়ে রেখে বাস্তবতার স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয়।
শেষ পর্ব: স্টেশনে ফেলে আসা এক না বলা "ভালোবাসি"
নাটকের সবচেয়ে হৃদয়বিদারক মুহূর্তটি আসে শেষে। বিয়ের কিছুদিন আগে রিয়া চাকরি ছেড়ে দিয়ে দূরে কোথাও চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। যাওয়ার দিন সে শেষবারের মতো আয়মানের সাথে দেখা করতে আসে। রেললাইনের পাশে দাঁড়িয়ে তারা দুজন অনেকক্ষণ নীরব থাকে। চারপাশের কোলাহলের মাঝেও তাদের দুজনের পৃথিবীটা ছিল একদম স্তব্ধ। ট্রেন আসার হুইসেল বাজতেই রিয়া যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। আয়মান তাকে আটকায় না, কিছু বলেও না। রিয়া ট্রেনে ওঠার আগে একবার পেছন ফিরে তাকায়। তার চোখে ছিল হাজারো প্রশ্ন আর একরাশ অভিমান। তার সেই চাহনির মানে ছিল, "কথা ছিল, তুমি অন্তত একবার আমাকে আটকাবে।"
ট্রেনটা যখন ধীরে ধীরে স্টেশন ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল, আয়মানের মনে হয় তার সম্পূর্ণ অস্তিত্বটাই যেন ট্রেনটার সাথে চলে যাচ্ছে। তার মনে পড়ে, রিয়াকে তার কতকিছু বলার ছিল। বলার ছিল, প্রথম দেখাতেই তাকে ভালো লেগেছিল। বলার ছিল, তার হাসিটা তার দিনের সব ক্লান্তি মুছে দিত। বলার ছিল, "ভালোবাসি"। কিন্তু কোনো কথাই বলা হলো না। প্ল্যাটফর্মে একা দাঁড়িয়ে আয়মান উপলব্ধি করে, জীবনের কিছু "কথা ছিল" কেবল না বলা অধ্যায় হয়েই থেকে যায়, যা সারাজীবন এক গভীর দীর্ঘশ্বাস হয়ে বুকের ভেতর আটকে থাকে। সম্পর্কটা হয়তো পূর্ণতা পায়নি, কিন্তু তাদের না বলা অনুভূতির গল্পটা দর্শকদের মনে এক চিরস্থায়ী দাগ কেটে যায়।
ডিসক্লেমার: এই গল্পটি নাটকের কাহিনীর উপর ভিত্তি করে একটি কল্পিত রচনা। থাম্বনেইলটি শুধুমাত্র তথ্য পরিবেশনের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে।
আয়মান আর রিয়ার এই অসম্পূর্ণ ভালোবাসার গল্পটি আপনার হৃদয়কে স্পর্শ করেছে? আপনি কি মনে করেন, আয়মানের উচিত ছিল বাস্তবতাকে মেনে না নিয়ে নিজের অনুভূতির কথা প্রকাশ করা? আপনার মূল্যবান মতামত নিচের কমেন্ট বক্সে আমাদের সাথে শেয়ার করুন। আপনার প্রতিটি মন্তব্যই আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা!