Tel Natok (তেল) Mosharraf Karim & Tania Brishty | Full Story Review & Watch Online | New Bangla Natok 2025

Tel | ত্যাল | Mosharraf Karim | Tania Brishty | Bangla New Natok 2025

Tel | Mosharraf Karim | Tania Brishty | Mehedi Rony তেল | Bangla New Natok 2025

ভূমিকা: তেলবাজির দুনিয়ায় এক সরল মানুষের গল্প

আমাদের চারপাশের সমাজটা এক অদ্ভুত তেলেসমাতিতে ভরা। এখানে যোগ্যতার চেয়ে তৈলমর্দন, অর্থাৎ তেল দেওয়ার গুরুত্ব অনেক বেশি। তেল দিতে পারলে ভাঙা নৌকায়ও সাগর পাড়ি দেওয়া যায়, আর না পারলে সোনায় মোড়ানো জাহাজও তীরে এসে ডুবে। " তেল " নাটকটি ঠিক এই সামাজিক বাস্তবতার এক নিদারুণ কিন্তু হাস্যরসাত্মক প্রতিচ্ছবি। নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র, সহজ সরল সোলায়মানকে (মোশাররফ করিম) কেন্দ্র করে গল্পটি এগিয়েছে, যিনি তেল মারার এই প্রতিযোগিতায় বরাবরই পরাজিত সৈনিক। তার বোকাসোকা সততা আর তেলবাজ কলিগদের সঙ্গে টিকে থাকার লড়াই আমাদের কখনো হাসাবে, কখনো ভাবাবে, আবার কখনো সমাজের এই কদর্য রূপ দেখে ভেতরটা পুড়িয়ে দেবে।

প্রথম পর্ব: সততার পুরস্কার যখন শুধুই তিরস্কার

গল্পের নায়ক সোলায়মান একজন ছাপোষা কেরানি, যিনি নিজের নীতি আর আদর্শ নিয়ে বাঁচেন। তার একটাই সমস্যা—তিনি তেল মারতে পারেন না। অফিসে তার জুনিয়র কলিগ হারুন (মেহেদী রনি) বড় সাহেবকে সকাল বিকাল নানা ধরনের তেল মেরে প্রমোশনের দৌড়ে এগিয়ে যায়। হারুনের একমাত্র যোগ্যতা হলো, সে বসের শার্টের রঙের সঙ্গে নিজের মোজার রং মিলিয়ে অফিসে আসে এবং বসের বলা পানসে জোক শুনেও অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। অন্যদিকে, সোলায়মান নিজের কাজে শতভাগ সৎ থেকেও বছরের পর বছর একই পদে পড়ে আছে। বসের সামান্য ভুল ধরিয়ে দেওয়ায় তার ইনক্রিমেন্ট পর্যন্ত আটকে যায়। সোলায়মানের স্ত্রী (তানিয়া বৃষ্টি) স্বামীর এই বোকামিতে ত্যক্ত-বিরক্ত। সে প্রায়ই বলে, "এই যুগে তেল ছাড়া গাড়ি চলে না, আর তুমি তেল ছাড়া ক্যারিয়ার চালাতে চাও? তোমার দ্বারা কিচ্ছু হবে না।" স্ত্রীর এমন কথায় সোলায়মান কষ্ট পেলেও নিজের নীতি থেকে একচুলও নড়তে চায় না।

একদিন অফিসে নতুন প্রজেক্ট আসে, যার দায়িত্ব পাওয়ার জন্য সোলায়মান ছিল সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থী। কিন্তু যথারীতি, বড় সাহেব প্রজেক্টের দায়িত্ব তুলে দেন তেলবাজ হারুনের হাতে। শুধু তাই নয়, তাকে হারুনের সহকারী হিসেবে কাজ করতে বলা হয়। এই অপমান সোলায়মানের বুকে তীরের মতো বিঁধে। সেদিন বাড়ি ফিরে স্ত্রীর সঙ্গে তার প্রচণ্ড ঝগড়া হয়। স্ত্রী তাকে সাফ জানিয়ে দেয়, " হয় তুমি তেল মারা শিখবে, নয়তো আমি বাপের বাড়ি চলে যাবো। তেল ছাড়া এই সংসারে আমি আর থাকতে পারব না!" জীবনের এই কঠিন মোড়ে এসে সোলায়মান সিদ্ধান্ত নেয়, এবার সেও তেল মারার শিল্পটা রপ্ত করবে।

দ্বিতীয় পর্ব: তেল মারার হাস্যকর প্রচেষ্টা ও নতুন সংকট

পরদিন থেকেই সোলায়মানের নতুন জীবন শুরু হয়। সে তেল মারা শেখার জন্য ইউটিউবে ভিডিও দেখা থেকে শুরু করে তেলবাজ হারুনকে অনুসরণ করতে থাকে। হারুন কীভাবে হাঁটে, কীভাবে হাসে, কীভাবে বসের প্রশংসা করে সবকিছু সে মনোযোগ দিয়ে নোট করে। কিন্তু তেল দেওয়া যার রক্তে নেই, সে কি আর তেল দিতে পারে? সোলায়মানের তেল দেওয়ার চেষ্টাগুলো একেকটা কমেডি শো তে পরিণত হয়। সে বসের টাক মাথার প্রশংসা করতে গিয়ে বলে, "স্যার, আপনার মাথায় একটা চুলও лишние নেই, একদম চাঁদের মতো চকচক করছে।" এই কথা শুনে অফিসের সবাই হাসতে হাসতে শেষ। বস তাকে কড়া ভাষায় সতর্ক করে দেন।

কিন্তু সোলায়মান হাল ছাড়ে না। সে এবার বসের জন্য তার পছন্দের খাবার রান্না করে নিয়ে যায়। কিন্তু ভুলবশত, সে বসের জন্য এমন এক খাবার নিয়ে যায়, যাতে তার মারাত্মক অ্যালার্জি। খাবার খেয়ে বসের অবস্থা কাহিল! তাকে হাসপাতালে পর্যন্ত ভর্তি করতে হয়। এই ঘটনার পর সোলায়মানের চাকরি যায় যায় অবস্থা। স্ত্রীর সঙ্গে তার দূরত্ব আরও বাড়তে থাকে। সোলায়মান বুঝতে পারে, তেল দেওয়া তার কাজ নয়। কিন্তু চাকরি আর সংসার বাঁচাতে তাকে এই তেলবাজির খেলা চালিয়ে যেতেই হবে। এই উভয়সংকটে পড়ে সোলায়মান মানসিকভাবে পুরোপুরি ভেঙে পড়ে।

তৃতীয় পর্ব: সত্যের উন্মোচন ও তেলবাজির মুখোশ

নাটকের ক্লাইম্যাক্স ঘনীভূত হয় যখন অফিসের সবচেয়ে বড় প্রজেক্টের ফাইল থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য গায়েব হয়ে যায়। এই প্রজেক্টের দায়িত্বে ছিল হারুন। ফাইল গায়েব হওয়ার পুরো দোষ চাপানো হয় সোলায়মানের ওপর, কারণ বসকে তেল মারার চেষ্টায় সে কয়েকবার হারুনের কেবিনে গিয়েছিল। হারুনও সুযোগ বুঝে সোলায়মানকে ফাঁসিয়ে দেয়। অফিসের সবাই তাকে চোর ভাবতে শুরু করে। তার স্ত্রীও বিশ্বাস করে যে, সোলায়মানই এই কাজ করেছে।

যখন সোলায়মান প্রায় হাল ছেড়ে দিয়েছে, ঠিক তখনই অফিসের নতুন জয়েন করা ইন্টার্ন মেয়েটি (শাকিলা পারভিন) তার পাশে দাঁড়ায়। সে সোলায়মানকে বিশ্বাস করে এবং আসল সত্য খুঁজে বের করার জন্য তাকে সাহায্য করে। তারা অফিসের সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে দেখতে পায়, ফাইলটি আসলে গায়েব করেছে খোদ তেলবাজ হারুন। সে অন্য একটি কোম্পানির কাছে মোটা টাকার বিনিময়ে প্রজেক্টের তথ্য বিক্রি করে দিয়েছে। এই প্রমাণ হাতে পেয়ে সোলায়মান আর দেরি করে না। সে সরাসরি কোম্পানির এমডি-র কাছে যায়।

শেষ পর্ব: সততার জয় এবং তেলের পরাজয়

শেষ পর্বে দেখা যায়, এমডি সাহেবের সামনে সমস্ত প্রমাণ পেশ করে সোলায়মান। হারুনের তেলবাজি আর দুর্নীতির মুখোশ খুলে যায়। এমডি সাহেব হারুনকে তৎক্ষণাৎ বরখাস্ত করেন এবং পুলিশের হাতে তুলে দেন। সোলায়মানের সততায় মুগ্ধ হয়ে তিনি তাকে শুধু তার চাকরিতেই পুনর্বহাল করেন না, বরং নতুন প্রজেক্টের সম্পূর্ণ দায়িত্ব তার হাতে তুলে দেন।

এই ঘটনার পর অফিসের সবার টনক নড়ে। যে বস সোলায়মানকে দেখতে পারত না, সেও এসে তার কাছে ক্ষমা চায়। সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসে তার স্ত্রীর মধ্যে। সে নিজের ভুল বুঝতে পেরে সোলায়মানের কাছে ফিরে আসে এবং বলে, "আমি ভুল ছিলাম। তেলের চাকচিক্যের চেয়ে সততার আলো অনেক বেশি শক্তিশালী। তুমি আর কখনো তেল দেওয়ার চেষ্টা করো না।" নাটকের শেষে দেখা যায়, সোলায়মান তার সততার পুরস্কার হিসেবে অফিসের সবচেয়ে বড় চেয়ারে বসেছে। তার মুখে তৃপ্তির হাসি। যে তেল তাকে ডোবাতে বসেছিল, সেই তেলের ঊর্ধ্বে উঠে সে প্রমাণ করে শেষ পর্যন্ত সত্য আর যোগ্যতারই জয় হয়।

সোলায়মানের এই তেলবাজির বিরুদ্ধে টিকে থাকার লড়াই আপনার কেমন লাগলো? আপনি কি মনে করেন, তেলবাজি করে জীবনে আসলেই সফল হওয়া যায়, নাকি শেষ পর্যন্ত সততারই জয় হয়? আপনার মূল্যবান মতামত নিচের কমেন্ট বক্সে আমাদের সাথে শেয়ার করুন। আপনার প্রতিটি মন্তব্যই আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা!

ডিসক্লেমার: এই গল্পটি নাটকের কাহিনীর উপর ভিত্তি করে একটি কল্পিত রচনা। থাম্বনেইলটি শুধুমাত্র তথ্য পরিবেশনের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.