তোমার অপেক্ষায় - একটি হৃদয় বিদারক অপেক্ষার গল্প | বাংলা নাটক ২০২৪

Tomar Opekhai | তোমার অপেক্ষায় | Apurba | Tasnia Farin | New Bangla Sad Natok 2024

Tomar Opekhai | Apurba | Tasnia Farin তোমার অপেক্ষায় | New Bangla Sad Natok 2024

ভূমিকা: সময়ের স্রোতে হারিয়ে যাওয়া এক প্রতিশ্রুতির গল্প

ভালোবাসা কি কেবলই কাছে থাকার নাম? নাকি শত বাধা, হাজারো দূরত্ব আর সময়ের নির্মম পরিহাসকেও হার মানিয়ে প্রিয় মানুষটির জন্য অপেক্ষা করার নামই ভালোবাসা? "তোমার অপেক্ষায়" নাটকটি ঠিক এমনই এক গভীর আত্মত্যাগ, বিশ্বাস আর মর্মস্পর্শী অপেক্ষার উপাখ্যান। এই গল্পটি আকাশ (অপূর্ব) এবং নীলা (তাসনিয়া ফরিন) নামের দুটি হৃদয়ের, যারা একে অপরকে কথা দিয়েছিল একসাথে জীবন পার করার, কিন্তু ভাগ্য তাদের জন্য এক ভয়ংকর ষড়যন্ত্রের জাল বুনে রেখেছিল। যে অপেক্ষা শুরু হয়েছিল বুকভরা আশা নিয়ে, সেই অপেক্ষার শেষটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? এই গল্প দর্শকদের এক আবেগঘন এবং রুদ্ধশ্বাস জগতে নিয়ে যাবে, যেখানে প্রতি মুহূর্তে প্রশ্ন জাগবে, ভালোবাসার শক্তি কি আসলেই নিয়তিকে বদলাতে পারে?

প্রথম পর্ব: প্রতিশ্রুতির নীল খাম আর বিচ্ছেদের ঝড়

গল্পের নায়ক আকাশ একজন প্রতিভাবান কিন্তু সংগ্রামরত গিটারিস্ট। তার স্বপ্ন অনেক বড়, নিজের একটি মিউজিক অ্যালবাম বের করবে এবং সারা দেশের মানুষ তার গান শুনবে। তার এই স্বপ্নের একমাত্র অনুপ্রেরণা হলো নীলা, এক প্রাণোচ্ছল তরুণী যে আকাশের সুরের চেয়েও বেশি ভালোবাসে আকাশকে। নীলা এক মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে, যার বাবা তার বিয়ের জন্য বড় ঘরের ছেলে খুঁজছেন। একদিন শহরের এক প্রান্তে লেকের ধারে বসে আকাশ নীলার হাত ধরে বলে, "আমি জানি আমার এখন কিছুই নেই, কিন্তু আমার বিশ্বাস আছে। তুমি কি আমার জন্য শুধু দুটো বছর অপেক্ষা করতে পারবে? আমি ফিরব, একজন সফল মানুষ হয়ে তোমার সামনে দাঁড়াব। কথা দিলাম।" নীলা मुस्कुराతూ উত্তর দেয়, "দুই বছর কেন, আমি সারাজীবন তোমার অপেক্ষায় থাকব।" সেই দিন আকাশ তার নিজের লেখা একটি গান নীলাকে গেয়ে শোনায় এবং গানের কথাগুলো একটি নীল খামে ভরে নীলার হাতে দিয়ে বলে, "যতদিন আমি না ফিরি, এই গানটা তোমার কাছে আমার আমানত হয়ে থাকবে।"

এরপরই গল্পের মোড় ঘুরে যায়। আকাশের বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় এবং চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন হওয়ায় আকাশ তার স্বপ্নের অ্যালবাম করার সুযোগটি ছেড়ে দিয়ে একটি বিদেশি জাহাজের চাকরিতে যোগ দেয়। সিদ্ধান্তটা কঠিন ছিল, কিন্তু পরিবারের জন্য তাকে এটা করতেই হতো। যাওয়ার আগে সে নীলাকে একটি চিঠি লেখে, কিন্তু সেই চিঠি নীলার ফুফাতো ভাই রাশেদের হাতে পড়ে, যে নীলাকে ছোটবেলা থেকেই পছন্দ করত। রাশেদ হিংসার বশবর্তী হয়ে সেই চিঠি নীলার কাছে পৌঁছাতে দেয় না। আকাশ চলে যাওয়ার পর দিনের পর দিন, মাসের পর মাস কেটে যায়, কিন্তু তার কোনো খবর না পেয়ে নীলার পৃথিবীটা অন্ধকার হয়ে আসে। সে ভাবতে শুরু করে, আকাশ হয়তো তাকে ভুলে গেছে এবং নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য তাকে একা ফেলে চলে গেছে।

দ্বিতীয় পর্ব: ভাঙা হৃদয়, নতুন জীবন এবং এক অচেনা অতিথি

দীর্ঘ পাঁচ বছর কেটে গেছে। এর মধ্যে নীলার পরিবার তাকে অনেক বুঝিয়ে রাশেদের সাথেই বিয়ে দিয়ে দেয়। নীলা তার ভাগ্যকে মেনে নিয়ে একপ্রকার যন্ত্রের মতো সংসার করতে থাকে। তার হাসি, আনন্দ সবকিছু যেন আকাশের সাথেই হারিয়ে গেছে। তার কাছে সেই নীল খামটি তখনও যত্ন করে রাখা আছে, যা সে কখনও খুলে দেখেনি। তার মনে হতো, এটা খুলে ফেললেই হয়তো অপেক্ষার শেষ চিহ্নটুকুও মুছে যাবে। অন্যদিকে, জাহাজে এক ভয়ংকর দুর্ঘটনায় আকাশ মারাত্মকভাবে আহত হয় এবং তার স্মৃতিশক্তি আংশিকভাবে হারিয়ে যায়। সে তার নাম, পরিচয় প্রায় সবকিছুই ভুলে যায়, শুধু তার অবচেতন মনে একটি মেয়ের অস্পষ্ট মুখ আর একটি অসমাপ্ত সুর ভেসে বেড়ায়।

বিদেশি এক হাসপাতালের সহায়তায় সুস্থ হয়ে উঠলেও তার অতীত মনে পড়ে না। একদিন গিটার হাতে নিয়ে আনমনে সে সেই সুরটিই বাজাচ্ছিল, যা সে নীলার জন্য তৈরি করেছিল। হাসপাতালের একজন বাঙালি ডাক্তার তার প্রতিভা দেখে তাকে দেশে ফিরে নিজের শেকড় খুঁজে বের করার পরামর্শ দেন। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর আকাশ দেশে ফেরে একজন সম্পূর্ণ অচেনা মানুষ হিসেবে, যার কাছে নিজের পরিচয় বলতে কিছুই নেই। সে শহরের পথে পথে গিটার বাজিয়ে বেড়ায়, যদি কোনো সুর বা কোনো মুখ তাকে তার অতীতে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে এই আশায়। একদিন সন্ধ্যায় এক রেস্তোরাঁর সামনে গিটার বাজানোর সময় নীলা তার স্বামী রাশেদের সাথে সেখান দিয়ে যাচ্ছিল। আকাশের গিটারের সেই চেনা সুর শুনে নীলার পা দুটো মাটিতে আটকে যায়। সে অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে থাকে আকাশের দিকে, কিন্তু আকাশ তাকে চিনতে পারে না। নীলা: (কাঁপা কাঁপা গলায়) "আপনি...আপনি এখানে?" আকাশ: (অবাক হয়ে) "দুঃখিত, আপনি কি আমাকে চেনেন? আমি কাউকে খুঁজছি, কিন্তু আমি জানি না সে কে।"

তৃতীয় পর্ব: ষড়যন্ত্রের উন্মোচন এবং সত্যের মুখোমুখি

আকাশের মুখে বিদেশি ভাষার শব্দ এবং তার স্মৃতিভ্রষ্টতার কথা শুনে নীলা হতবাক হয়ে যায়। রাশেদ পরিস্থিতি বুঝতে পেরে দ্রুত নীলাকে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যায় এবং তাকে বোঝায় যে এটা কেবলই চেহারার মিল, আকাশ হতেই পারে না। কিন্তু নীলার মন মানতে চায় না। সে পরেরদিন আবার সেই জায়গায় যায় এবং আকাশের সাথে কথা বলে তার সম্পর্কে সব জানার চেষ্টা করে। আকাশের কাছে থাকা একটি পুরনো ডায়েরির ছেঁড়া পাতায় সে তার নিজের নামের আদ্যক্ষর "নী" দেখতে পায়। নীলার মন নিশ্চিত হয়ে যায় যে এই সেই আকাশ। সে রাশেদকে সবকিছু খুলে বলে এবং আকাশকে তাদের বাড়িতে আশ্রয় দেওয়ার জন্য অনুরোধ করে, যদি পুরোনো পরিবেশে তার স্মৃতি ফিরে আসে। রাশেদ মুখে রাজি হলেও ভেতরে ভেতরে তার ভয়ংকর রূপটি বেরিয়ে আসে।

নাটকের সবচেয়ে সাসপেন্সপূর্ণ মুহূর্তটি তৈরি হয় যখন নীলা তার পুরনো বাক্স থেকে আকাশের দেওয়া সেই নীল খামটি বের করে। খামটি খোলার সাথে সাথে সে ভেতরে চিঠি এবং গানের কথাগুলো পায়। চিঠিতে লেখা ছিল, "নীলা, বাবার জন্য আমাকে এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হলো। আমি খুব শিগগিরই ফিরব। আমার অপেক্ষায় থেকো, তোমার আকাশ।" চিঠিটা পড়ার পর নীলার পুরো পৃথিবীটা দুলে ওঠে। সে বুঝতে পারে, আকাশ তাকে ঠকায়নি, বরং ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের শিকার হয়েছে। ঠিক তখনই রাশেদ ঘরে প্রবেশ করে এবং সবকিছু দেখে ফেলে। তার আসল চেহারা প্রকাশ পেয়ে যায়। সে চিৎকার করে বলে, "হ্যাঁ, আমিই চিঠিটা লুকিয়েছিলাম! আমি তোমাকে ভালোবাসি, তাই আকাশকে তোমার জীবন থেকে সরাতে চেয়েছিলাম। ও বেঁচে আছে এটাই ওর ভাগ্য, কিন্তু আমি ওকে আর তোমার জীবনে ফিরতে দেবো না।" রাশেদ আকাশকে আঘাত করার জন্য উদ্যত হয়।

শেষ পর্ব: অপেক্ষার অবসান এবং এক অসমাপ্ত পরিণতি

রাশেদের সেই হিংস্র রূপ দেখে এবং তার কথা শুনে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে আকাশের মাথায় তীব্র আঘাত লাগে। কিন্তু এই আঘাত তার জন্য শাপে বর হয়ে আসে। ঠিক যেন সিনেমার মতো তার সমস্ত পুরোনো স্মৃতি বিদ্যুৎ গতিতে ফিরে আসে। সে নীলার দিকে তাকিয়ে কাঁপুনি গলায় ডেকে ওঠে, "নীলা..."। এই একটি ডাকেই যেন পাঁচ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটে। আকাশ আর রাশেদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয় এবং নীলার চিৎকারে আশেপাশের মানুষ ছুটে এসে পুলিশকে খবর দেয়। রাশেদ তার কৃতকর্মের জন্য ধরা পড়ে।

নাটকের শেষ দৃশ্যটি অত্যন্ত আবেগঘন। হাসপাতালে বেডে শুয়ে থাকা আকাশের পাশে বসে আছে নীলা। তাদের দুজনের চোখেই জল, কিন্তু এই জল কষ্টের নয়, এতোদিন পর একে অপরকে খুঁজে পাওয়ার। আকাশ নীলার হাত ধরে বলে, "আমার ফিরতে অনেক দেরি হয়ে গেল, তাই না?" নীলা মাথা নেড়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে এবং বলে, "তুমি তো ফিরে এসেছো, এটাই অনেক। আমি তো আমার পুরো জীবনটাই তোমার অপেক্ষায় কাটিয়ে দিতে পারতাম।" আকাশ হাসছে উত্তর দেয়, "অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়েছে নীলা, এখন শুধু একসাথে বাকি জীবনটা কাটানোর পালা।" যদিও তাদের মিলন হয়, কিন্তু গল্পটা রেখে যায় এক গভীর প্রশ্ন। যে পাঁচটি বছর তাদের জীবন থেকে হারিয়ে গেল, তার শূন্যস্থান কি কখনো পূরণ হবে? নিয়তির কাছে হেরে যাওয়া এই ভালোবাসা শেষ পর্যন্ত জয়ী হলেও, তাদের দুজনের মনে যে ক্ষত তৈরি হয়েছে, তা হয়তো কখনোই শুকাবে না। যে অপেক্ষা তাদের আলাদা করে দিয়েছিল, সেই অপেক্ষাই তাদের ভালোবাসাকে অমর করে দিয়ে গেল।

আকাশ ও নীলার এই মর্মস্পর্শী অপেক্ষার গল্পটি আপনার কেমন লাগলো? আপনি কি মনে করেন, সত্যিকারের ভালোবাসা সময়ের সমস্ত হিসাবকে মিথ্যা প্রমাণ করে দিতে পারে? আপনার মূল্যবান মতামত নিচের কমেন্ট বক্সে আমাদের সাথে শেয়ার করুন। আপনার প্রতিটি মন্তব্যই আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা!

ডিসক্লেমার: এই গল্পটি নাটকের কাহিনীর উপর ভিত্তি করে একটি কল্পিত রচনা। থাম্বনেইলটি শুধুমাত্র তথ্য পরিবেশনের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.