শ্বশুর বাড়ির আপ্যায়ন - নিলয় ও হিমির হাসির নাটক | Shoshur Barir Appayon Full Story
Shoshur Barir Appayon | Niloy Alamgir | Heme শ্বশুর বাড়ির আপ্যায়ন | Full Natok | Mohin Khan | EID Natok
ভূমিকা: জামাই আদরের আড়ালে লুকিয়ে থাকা রহস্য
বাঙালির জীবনে "শ্বশুরবাড়ি" শব্দটি শুনলেই মনের মধ্যে লাড্ডু ফুটে ওঠে, চোখের সামনে ভেসে ওঠে এলাহি কারবার আর জামাই আদরের নানা রঙের দৃশ্য। কিন্তু এই আদর যখন স্বাভাবিকের মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, তখন তার পেছনে কি শুধুই ভালোবাসা থাকে, নাকি অন্য কোনো রহস্যের জাল বোনা হয়? জনপ্রিয় জুটি নিলয় আলমগীর এবং জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি অভিনীত মহিন খানের অনবদ্য সৃষ্টি "শ্বশুর বাড়ির আপ্যায়ন" নাটকটি ঠিক এমনই এক মজার অথচ সাসপেন্সে ভরপুর গল্পের দরজা খুলে দেয়। এই গল্প শুধু বিনোদনের নয়, এটি সামাজিক প্রেক্ষাপটে জামাই আদরের বাড়াবাড়ি এবং তার পেছনের মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েনের এক নিখুঁত প্রতিচ্ছবি, যা দর্শকদের হাসির সাগরে ভাসাতে ভাসাতে এক গভীর চিন্তার খোরাক জোগাবে।
প্রথম পর্ব: রাজকীয় স্বাগত এবং সন্দেহের প্রথম বীজ
গল্পের সূচনা হয় নিলয় (নিলয় আলমগীর) এবং তার স্ত্রী হিমিকে (জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি) দিয়ে, যারা বেশ আনন্দ আর উত্তেজনা নিয়ে হিমির বাবার বাড়ি অর্থাৎ নিলয়ের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে আসে। বাড়িতে পা রাখার সাথে সাথেই শুরু হয় এক অভাবনীয় আপ্যায়ন পর্ব। শ্বশুর (ফখরুল বাশার মাসুম) আর শাশুড়ি (শেলী আহসান) যেন জামাইয়ের জন্য রীতিমতো লাল গালিচা পেতে রেখেছেন। পোলাও, কোর্মা, কোপ্তা, কাবাব—খাবারের টেবিলে যেন পদের শেষ নেই। শুধু তাই নয়, শ্যালিকা থেকে শুরু করে বাড়ির প্রত্যেক সদস্যের চোখেমুখে জামাইয়ের জন্য উপচে পড়া ভালোবাসা। প্রথমদিকে নিলয় এই এলাহি কাণ্ড দেখে যারপরনাই খুশি হয়। তার মনে হতে থাকে, এমন শ্বশুরবাড়ি পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার।
কিন্তু এই অতিরিক্ত আদরই ধীরে ধীরে তার মনে সন্দেহের জন্ম দেয়। সে লক্ষ্য করে, তার প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতিটি কথা যেন শ্বশুরের কঠোর নজরদারিতে রয়েছে। তার ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে রাতে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত সবকিছুই যেন এক অদৃশ্য রুটিনে বাঁধা। নিলয় যদি বলে তার পেটে ব্যথা, সাথে সাথে গোটা পরিবার এমনভাবে চিন্তিত হয়ে পড়ে, যেন কোনো জাতীয় বিপর্যয় ঘটে গেছে। এক রাতে নিলয় হিমিকে ফিসফিস করে বলে, "আচ্ছা, তোমার বাবা-মা কি আমাকে জামাই হিসেবে পেয়েছে নাকি কোনো বিরল প্রজাতির প্রাণী পেয়েছে? এদের এত আদর তো আমার আর হজম হচ্ছে না। ডাল মে কুচ কালা হে" হিমি তার স্বামীর কথা হেসে উড়িয়ে দিলেও নিলয়ের মনের ভেতর সন্দেহের কাঁটাটা আরও গভীর হতে থাকে।
দ্বিতীয় পর্ব: আদরের নামে अत्याचार এবং স্বাধীনতার হাহাকার
দিন গড়ানোর সাথে সাথে নিলয়ের অবস্থা খাঁচায় বন্দি পাখির মতো হয়ে ওঠে। শ্বশুরবাড়ির ভালোবাসা তার কাছে রীতিমতো অত্যাচার মনে হতে শুরু করে। সে বন্ধুদের সাথে ফোনে কথা বলতে গেলে শ্বশুর মিষ্টি হেসে পাশে এসে বসেন। একটু বাইরে ঘুরতে যেতে চাইলে শাশুড়ি অজুহাত দেখান যে, 'জামাইয়ের স্বাস্থ্যের জন্য বাইরের রোদ একদমই ভালো নয়'। এমনকি নিলয়ের পোশাক পরা থেকে শুরু করে তার হাঁটাচলা পর্যন্ত সবকিছুতেই শ্বশুর-শাশুড়ির 'মিষ্টি পরামর্শ' তাকে অতিষ্ঠ করে তোলে। এই নিয়ন্ত্রিত জীবন তার পুরুষত্বে আঘাত হানতে শুরু করে। সে বুঝতে পারে, এই রাজকীয় আপ্যায়নের আড়ালে তার স্বাধীনতাকে পুরোপুরি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।
নাটকের সবচেয়ে হাস্যকর অথচ সাসপেন্সপূর্ণ মুহূর্তটি আসে যখন নিলয় বাড়ির ছাদ থেকে পালানোর চেষ্টা করে। সে তার এক বন্ধুকে ফোন করে সব খুলে বলে এবং তাকে উদ্ধারের জন্য পরিকল্পনা করে। কিন্তু তার শ্বশুর যেন সবকিছু আগে থেকেই আঁচ করতে পারেন। নিলয় ছাদে ওঠার সাথে সাথেই দেখে, তার শ্বশুর সেখানে গরম চায়ের কাপ হাতে দাঁড়িয়ে আছেন আর বলছেন, "বাবা, তোমার কি ঠান্ডা লাগছে? ছাদে একা একা কী করছ?" এই ঘটনায় নিলয়ের পালানোর সব পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। সে বুঝতে পারে, এই বাড়িটা একটা সোনার খাঁচা, যেখান থেকে বের হওয়া প্রায় অসম্ভব। তার অসহায়ত্ব এবং শ্বশুরের ধূর্ততার এই কম্বিনেশন গল্পে এক নতুন মাত্রা যোগ করে, যা দর্শকদের হাসাতে হাসাতে পেটে খিল ধরিয়ে দেয়।
তৃতীয় পর্ব: রহস্যের জটমুক্তি ও শ্বশুরের স্বীকারোক্তি
নিলয়ের মানসিক অবস্থা যখন চরমে, তখন সে শেষ চেষ্টা হিসেবে তার শ্বশুরের মুখোমুখি হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সে সরাসরি তাকে জিজ্ঞেস করে, "বাবা, আমি আপনাদের কাছে সত্যিই কৃতজ্ঞ। কিন্তু এই অতিরিক্ত আদর আর নিয়ন্ত্রণের কারণটা আমি কিছুতেই বুঝতে পারছি না। আপনারা কি আমার কাছ থেকে কিছু লুকাচ্ছেন?" নিলয়ের এই সরাসরি প্রশ্নে তার শ্বশুর প্রথমে চমকে গেলেও পরে দীর্ঘশ্বাস ফেলে আসল সত্য প্রকাশ করতে বাধ্য হন। তিনি যা বলেন, তা শোনার জন্য নিলয় বা দর্শক কেউই প্রস্তুত ছিল না।
শ্বশুর জানান, তাদের এক দূরসম্পর্কের আত্মীয়ের মেয়ের বিয়ে হয়েছিল এক ছেলের সাথে যে বিয়ের পরপরই মোটা অঙ্কের যৌতুক নিয়ে পালিয়ে যায়। সেই ঘটনার পর থেকে তিনি জামাই নামক प्रजाति'র ওপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন। তিনি ভয় পেতেন যে, নিলয়ও হয়তো তার মেয়ের জীবনটা নষ্ট করে দেবে। তাই তিনি নিলয়কে চোখে চোখে রাখার জন্য এবং বাড়ির আরাম-আয়েশে ভুলিয়ে রাখার জন্য এই 'আপ্যায়নের নাটক' সাজিয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন, নিলয় যেন বাইরের জগৎ ভুলে গিয়ে এই বাড়ির আরাম ও বিলাসিতার প্রতি পুরোপুরি আসক্ত হয়ে পড়ে এবং তার মেয়েকে ছেড়ে যাওয়ার কথা দ্বিতীয়বার চিন্তাও না করে। শ্বশুরের এই অদ্ভুত যুক্তি শুনে নিলয়ের মাথা ঘুরে যায়।
শেষ পর্ব: ভুল বোঝাবুঝির অবসান এবং সম্পর্কের নতুন শুরু
শ্বশুরের ভয় আর তার পেছনের কারণটা জানার পর নিলয়ের রাগ মুহূর্তে গলে জল হয়ে যায়। সে বুঝতে পারে, তার শ্বশুর যা কিছু করেছেন, তা তার মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই করেছেন। হয়তো তার পথটা ভুল ছিল, কিন্তু উদ্দেশ্যটা ছিল সৎ। নিলয় তার শ্বশুরকে জড়িয়ে ধরে বলে, "বাবা, সব মানুষ একরকম হয় না। আমি আপনার মেয়েকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি, কোনো কিছুর লোভে নয়। আপনার মেয়ে আমার কাছে আপনার মতোই মূল্যবান।" এই কথা শুনে শ্বশুর নিজের ভুল বুঝতে পারেন এবং নিলয়ের কাছে ক্ষমা চান।
নাটকের শেষে দেখা যায়, গোটা পরিবারে যে সন্দেহের কালো মেঘ জমেছিল, তা কেটে গিয়ে এক নতুন সম্পর্কের সূর্য ওঠে। শ্বশুর তার জামাইকে পূর্ণ স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেন এবং তাদের মধ্যে বাবা-ছেলের মতো এক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। নিলয় বুঝতে পারে, শ্বশুরবাড়ির ভালোবাসা খাঁটি হলে তা কখনও অত্যাচারের কারণ হতে পারে না, বরং তা জীবনের সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ হয়ে ওঠে। এইভাবেই একটি হাস্যরসাত্মক ভুল বোঝাবুঝির মধ্য দিয়ে নাটকটি শেষ হয়, কিন্তু দর্শকদের মনে সম্পর্কের বিশ্বাস এবং খোলামেলা আলোচনার গুরুত্ব সম্পর্কে এক গভীর বার্তা রেখে যায়।
ডিসক্লেমার: এই গল্পটি নাটকের কাহিনীর উপর ভিত্তি করে একটি কল্পিত রচনা। থাম্বনেইলটি শুধুমাত্র তথ্য পরিবেশনের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে।

নিলয়ের শ্বশুরবাড়ির এই মজাদার আপ্যায়ন এবং তার পেছনের সাসপেন্সপূর্ণ গল্পটি আপনার কেমন লাগলো? আপনি কি মনে করেন যে, সম্পর্কের মধ্যে খোলামেলা আলোচনা যেকোনো ভুল বোঝাবুঝি দূর করতে পারে? আপনার মূল্যবান মতামত নিচের কমেন্ট বক্সে আমাদের সাথে শেয়ার করুন। আপনারা যদি এই গল্পের পার্ট টু চান, তবে সেটাও কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না! আপনার প্রতিটি মন্তব্যই আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা!